“ওডিসি” বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
পৃথিবীর চারটি প্রাচীন মহাকাব্যের একটি হল ‘ওডিসি’। এর রচয়িতা প্রাচীন গ্রীসের মহাকবি হােমার । তিনি খ্রীস্টপূর্ব অষ্টম শতকের প্রথম পাদে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তার জন্মস্থান সম্পর্কে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত কোনাে সত্য আজও পর্যন্ত উদঘাটিত হয়নি। প্রথম জীবনে তিনি একজন চারণকবি ছিলেন। ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করতেন গ্রীকভাষাভাষী অঞ্চলে। গ্রীসের বিভিন্ন অঞ্চলে তাঁর জনপ্রিয়তাও ছিল ব্যাপক। তাই গ্রীসের নানা অঞ্চলের অধিবাসীদের পক্ষ থেকে হােমারের জন্মস্থান সম্পর্কে যেসব স্থানের দাবি ওঠে তা হল— স্মার্ণা, কলােফিন, কিয়স, রােডস, সাইপ্রাস, আর্গস ও এথেন।
হােমারের পিতা ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত চারণকবি। তখনকার অন্যান্য চারণকবিদের মতাে হােমারও বহুবর্ণ-চিত্রিত এক আলখাল্লা পরে বীণা হাতে ভ্রমণ। করতেন। তৎকালীন গ্রীসের রাজনৈতিক পরিবেশ অশান্ত থাকলেও কুশলী কবিদের সম্মানজনক স্থান ছিল সমাজে। স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে হােমার তার বীণাটি হাতে নিয়ে চারণকবি হিসেবে বেরিয়ে পড়েন দেশভ্রমণের উদ্দেশ্যে।
হােমার ছিলেন সুকবি। শুধু তাই নয় বর্তমান বা অতীতের যে কোনাে বিষয়ে পদরচনায় সিদ্ধহস্ত হােমার একজন সুগায়কও ছিলেন। মধুর কণ্ঠে স্বরচিত পদগুলাে গান করে মুগ্ধ করতে পারতেন সকলকে। চারণকবি হিসেবে পদরচনা করতে গিয়ে তিনি অনেক সময় কোনাে জাতীয় বীরের জীবনালেখ্য অবলম্বন করে মহাকাবের আকারে দীর্ঘ আখ্যান কাব্য রচনা করতেন। আর সেই আখ্যান কাব্যটি এক সপ্তাহ ধরে প্রত্যেক রাতে জনগণের সামনে সুরেলা কণ্ঠে আবৃত্তি করতেন হােমার । ‘ওডিসি’তে বর্ণিত চারণকবি ফেমিয়াস ও ডেমােডােকাসের মতাে কোনাে যুদ্ধবিগ্রহ বা বংশগৌরব সম্বন্ধে মুখে মুখে গান রচনা করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করতে পারতেন।