“আরমান শেখ ও তার শেকড় সংক্রান্ত জটিলতা” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
বাংলাদেশ স্বাধীনতার সাঁইত্রিশ বছর পরেও মুক্তি পায়নি অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার শৃঙ্খল থেকে। এদেশের ভূমিজ মানুষগুলাে তবুও তপ্ত তার মাটির গন্ধ শুকে। আরমান শেখও মাটির কাদা শরীরে মেখে জুড়ায় তার দেহ। আফ্রিকার দারিদ্র নিপীড়িত দেশগুলাের প্রায় সমান সমস্যা ভােগ করে এদেশ । দরিদ্র থেকে ক্রমশ দরিদ্রতর হওয়াই যেন এদেশের জনগণের নিয়তি। জীবনযাত্রার মান যখন অন্যান্য রাষ্ট্রগুলােয় চলে যাচ্ছে অনেক উঁচু মানে তখনও এদেশের মানুষের জীবনমানের পারদ ক্রমশ নিম্নগামী। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এখনও ন্যূনতম দুমুঠো ভাতের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি জাতীয় অমানবিক বৃত্তি বেছে নিতে বাধ্য হয় কিছু অসম-বন্টন-নির্ভর আন্তর্জাতিক পলিসির কারণে। এতসব পশ্চাৎগামী পরিস্থিতির মাঝে এক শ্রেণীর ঐতিহ্যবােধহীন মানুষের তীব্র উচ্চাকাঙ্খ পিতৃপুরুষের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করছে প্রবীণ মানুষগুলােকে। শহরে গড়ে তুলছে পরজীবী শেকড়ছিন্ন বনসাই প্রকল্পনা। বিশ্বায়ন বিশ্বরাজনীতি বিশ্ববানিজ্যনীতির দীর্ঘ অসাধু হাত এর স্পর্শে ভেঙে যাচ্ছে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবােধ বিশ্বাস সহনশীলতার পারিবারিক বৃত্ত। এরকমই এক প্রায়-শেকড় উন্মল পরিস্থিতির শিকার ভূমি সংলগ্ন কৃষক আরমান শেখ। ধান ক্ষেতের গন্ধে যে প্রতিদিন নিজের পরমায় দীর্ঘ করে সঞ্চয় করে বেঁচে থাকার প্রেরণা। নিজের দুই ছেলে হান্নান ও মান্নানের বিদেশ যাবার প্রচন্ড জেদ তাকে দিশেহারা করে তােলে অস্তিত্বহীনতার আতঙ্কে । স্ত্রী ফুলজান ও আরমান শেখের বুকের মধ্যে ধিকি ধিকি জুলে যােগ্য উত্তরসুরী বড় ছেলের অকালমৃত্যুর বিষজ্বালা। আরমান শেখের আরেক যােগ্য উত্তরসুরী ছােট মেয়ে তাজনুরও প্রতিনিয়ত লড়াই করে জীবন সমাজ প্রথা প্রচলিত সংকীর্ণ পরিমণ্ডল এবং আন্তর্জাতিক বহুমুখী আগ্রাসী অপপ্রভাবের বিরুদ্ধে। কখনাে জিতে যায় সে ও তার সমমনা যােদ্ধারা। কখনাে নিয়তির অনিবার্য পরিণতির কাছে বাধ্য হয় হার মেনে নিতে। এতাে সব লড়াইয়ের মধ্যে তাজনুরের জীবন পরিকল্পনা সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে। তারপরও বজায় থাকে শুভবােধ মূল্যবােধের পরিপােষণ। সমস্যা এতাে বেশী আর সমাধানের সুযােগ এতাে অল্প যে প্রচণ্ড বেদনাবােধ ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট থাকেনা স্বপ্লপিয়াসী মানুষের। শেকড় ছেড়ার অসহনীয় যন্ত্রণায় ভােগে আরমান শেখ ও তার কন্যা তাজনুর। তারপরও মানুষ স্বপ্ন দেখে রাশি রাশি সুগন্ধি ধানের। মুঠো মুঠো ধান বীজে মনােময় পলি আবাদের। ঐতিহ্যলগ্ন মানুষেরা এখনও নিজেদের স্বভিমানের সবটুকু ঐশ্বর্য লুটিয়ে দেয় একফালি সম্ভাবনাময় সকালের প্রত্যাশায়।