আপনাদের সকলের সঙ্গে বােধহয় এদের দুজনের পরিচয় নেই। গল্প লেখার আগে এঁদের সঙ্গে আপনাদের আলাপ করিয়ে দিই, তাতে এই ঝাঁঝালাে তরল কাহিনী পান করা সহজ হবে। প্রথম জন, ঐ যিনি এক হাত গালে দিয়ে আরেক হাত গেলাস ধরে টেবিলের ডানপাশে বসে আছেন, যাঁর চোখে মােটা কাঁচের চশমা, এক মাথা এলােমেলাে সাদা-কালাে চুল, গালে জুলফির নিচে একটা লাল তিল ; যিনি এই মাত্র এক চুমুকে পুরাে গেলাসটা সাফ করে টেবিলে আধুলি ঠুকে বেয়ারাকে ডাকছেন তিনি হলেন জয়দেব পাল। আর জয়দেববাবুর মুখােমুখি উল্টোদিকের চেয়ারে বসে আছেন, মহিমাময়, এর পদবীর প্রয়ােজন নেই, মহিমাময়ই যথেষ্ট, এ রকম নামের খুব বেশি লোেক নেই। মহিমাময়ের হাতেও গেলাস। মহিমাময় জয়দেবের চেয়ে মােটা এবং তাঁর মাথায় ছােটখাট ঝকমকে একটা টাক। মহিমাময়ের গলার স্বর খুব ভারি এবং সবসময়েই তিনি উচ্চগ্রামে কথা বলেন। জয়দেব এবং মহিমাময় দুজনেই বাল্যবন্ধু। নেবুতলা করােনেশন বয়েজ হাই ইংলিশ স্কুলে দুজনে ক্লাশ থ্রি থেকে একই ক্লাশে পড়েছেন, দুজনেই প্রথম বছরের স্কুল ফাইন্যাল। তার মানে এই মুহুর্তে দুজনেই কিঞ্চিৎ উৰ্ব্ব পঞ্চাশ। এই ব্যাপারটা, মানে বয়েসের ব্যাপারটা বেশ জটিল। এখন জয়দেবের বয়েস বাহান্ন, মহিমাময়ের তিপ্পান্ন । জয়দেব বলেন, যাহা বাহান্ন, তাহা তিপ্পান্ন । আর মহিমাময় বলেন, “জানিস, ব্যাপারটা এতাে সােজা নয়। যখন তাের বয়েস ছিলাে এক, আমার বয়েস ছিলাে দুই, এক সময়ে আমার বয়েস তাের বয়েসের ডবল ছিলাে, সে কথাটা ভুলবি না। বয়েসের ব্যাপারটা মহিমাময় আর জয়দেববাবুর নিতান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।