“বুদ্ধিশুদ্ধি” বইয়ের ফ্লাপের লেখা:
তারাপদ রায়ের কলমে রম্যরচনা, চলতি কথায় একেই কি বলে সােনায় সােহাগা ? নিশ্চিত তাই। নইলে পাশাপাশি এই শব্দগুলি দেখামাত্র পাঠকের মুখমণ্ডল কেন হয়ে ওঠে উজ্জ্বল, হাসিখুশী ? আসলে এতদিনে একটি কথা সবাই জেনে গেছেন। তারাপদ রায়ের রম্যরচনা মানেই অজস্র খােশগল্পের অফুরন্ত। তা সে বইয়ের নাম যাই হােক—জ্ঞানগম্যি বা কাণ্ডজ্ঞান, বিদ্যেবুদ্ধি বা এই বুদ্ধিশুদ্ধি। বিষয় বদলায়, কিন্তু স্টক ফুরােয় না তারাপদ রায়ের। তাঁর লেখাতে প্রসঙ্গ মানেই হাসির সঙ্গ। এমনই এক বর্ণনাভঙ্গি তাঁর যে, পুরনাে গল্পও ফুটে ওঠে সদ্যতম হয়ে, নতুন অভিজ্ঞতাকেও মনে হয় চিরকালীন রঙ্গময়। শ্লেষ নয়, জ্বালা নয়, আঘাত নয়, তাঁর লেখার আদ্যন্ত আকর্ষণ—কৌতুকরস। সে-কৌতুকও সূক্ষ্ম এবং সর্বজনভােগ্য। ঝকঝকে, বুদ্ধিদীপ্ত, বিদ্বেষবর্জিত সরস গল্পের খনি তিনি। রসিকতা ও হাসির গল্পের স্বভাবলক্ষণ নাকি মহাকাশের ধূমকেতুর মতাে। অনেকদিন পরপর ঘুরেফিরে আসে। এই বইতে তেমনই কিছু রসিকতা ও হাসির গল্পকেও সেভাবেই ফিরে পেয়ে আহ্লাদিত বােধ করবেন পাঠককুল। আবার, দূরদর্শন নিয়ে, কথােপকথন নিয়ে, পরিবর্তন নিয়ে, বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে, পণ্ডিতমশাইদের নিয়ে, দুর্ঘটনা নিয়ে, শৈশব নিয়ে, সাংবাদিকদের নিয়ে, রাতের কলকাতা নিয়ে, খানদান নিয়ে, বিজ্ঞাপন নিয়ে যেসব গল্প ও অভিজ্ঞতার কাহিনী শুনিয়েছেন এখানে তিনি, তার অধিকাংশই একেবারে তাজা। এমনকি যেসব বিষয় তাঁর লেখাতে বারবার আসে—প্রেম, দাম্পত্যজীবন, ভুল, উন্মাদ, স্মরণ-বিস্মরণ জাতীয়—সেগুলিকেও এই বইতে নতুন মনে হবে। অধুনালুপ্ত ‘অচলপত্র থেকে উদ্ধার করা কৌতুককাহিনীগুলি এ বইয়ের আকর্ষণ বাড়িয়েছে। সেইসঙ্গে, বিদ্যাসাগর, ভাষাতত্ত্ব, রাম, কৃষ্ণ ও রামকৃষ্ণ, সাহানা দেবীর ‘স্মৃতির খেয়া প্রভৃতি প্রসঙ্গের লেখাগুলিতেও ফুটে উঠেছে। অন্যস্বাদের আকর্ষণ।