“চাপরাশ” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
চাপরাশ যে বহন করে সে-ই চাপরাশি। পেতলের তকমা বুকে লাগানাে অনেক চাপরাশিকে আমাদের চারপাশে দেখতে পাই। রাজ্যপালের, জজসাহেবের অথবা মালিকের চাপরাশি। কিন্তু এই উপন্যাসে বুদ্ধদেব গুহ এযাবৎ অচেনা এমন অনেক চাপরাশির প্রসঙ্গ এনেছেন যাঁরা শুধুমাত্র ঈশ্বরেরই চাপরাশ বহন করছে। কী সে চাপরাশ ? এই উপন্যাসের পাতায় পাতায় তারই আলেখ্য। এই উপন্যাস যখন ধারাবাহিক প্রকাশিত হচ্ছিল তখন বহু বুদ্ধিজীবী ও মৌলবাদী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, কোপ মারার হুমকি দিতেও ছাড়েননি। অথচ এই উপন্যাসে ‘ধর্ম’, ‘ঈশ্বর’ ও অন্যান্য অনেক বিষয় নতুন তাৎপর্যে উদ্ভাসিত । অন্যতর আলাের দিশারী। ‘চাপরাশ’-এর বিষয়বস্তু গুরুগম্ভীর, কোথাও কোথাও স্পর্শকাতর এবং তর্কে-বিতর্কে বিপজ্জনক। তবু এক মর্মস্পর্শী, বেগবান গল্পের মাধ্যমে লেখক এই আখ্যানকে কালােত্তীর্ণ করে তুলেছেন। আখ্যানের কল্পিত জগৎ থেকে উঠে এসে চারণ নামের মানুষটি আমাদের প্রচলিত ধ্যানধারণাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে সে। ঈশ্বরবিশ্বাস যে মূখামি নয়, ধর্মবিশ্বাস যে গহিত অপরাধ নয় তা সে নিজের জীবন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। চারণের গভীর উপলব্ধি এই রকম : ‘জিষ্ণু মহারাজ একদিন ‘চাপরাশ’-এর কথা বলেছিলেন। মনে আছে চারণের। একজন চাপরাশিই শুধু জানে চাপরাশ বইবার আনন্দ। সেই চাপরাশ ঈশ্বরেরই হােক কি কোনও নারীর। অথবা কোনও গভীর বিশ্বাসের। যাঁরা ধর্ম মানেন না, ঈশ্বর মানেন না কিংবা যাঁরা মানেন অত্যন্ত অন্ধভাবে—এই দুপক্ষের সামনেই স্পষ্টবা, সাহসী এবং সত্যসন্ধ লেখক মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে জীবনের সত্যকে তুলে ধরেছেন।