“ইসলামের যাকাত বিধান-দ্বিতীয় খণ্ড” বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
কুরআন মজীদে যাকাত প্রসঙ্গ নামায অপেক্ষাও সংক্ষিপ্ত এবং মােটামুটিভাবে আলােচিত হয়েছে। কোন সব ধন-মালে যাকাত ফরয হবে, তাতে কত পরিমাণ হলে কত পরিমাণ যাকাত ধার্য হবে, কুরআনের আয়াতসমূহে তা বলা হয়নি। এ পর্যায়ে যেসব শর্ত রয়েছে—যেমন মালিকানার একটি বছর অতিবাহিত হওয়ার, নির্দিষ্ট নিসাব পরিমাণের মালিক হওয়া এবং তার কম পরিমাণের ওপর যাকাত ধার্য না হওয়া—ইত্যাদি বিষয়েও কুরআন মজীদে কিছুই আলােচিত হয়নি। আইন প্রণয়নমূলক ‘সুন্নাত’ এ পর্যায়ে বিরাট অবদান রেখেছে। তা যেমন রাসূলে করীম (স)-এর কথার দ্বারা প্রমাণিত, তেমনি তার কাজও এক্ষেত্রে অকাট্য ও স্পষ্ট। তা যাকাত পর্যায়ের অবিস্তারিত কথাকে সবিস্তারে উপস্থাপিত করেছে, যেমন সুস্পষ্ট করে দিয়েছে নামায সংক্রান্ত যাবতীয় কথা। আর অত্যন্ত নির্ভরযােগ্য ও সুবিন্যস্ত মহান ব্যক্তিগণ নবী করীম (স) থেকে তা অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বর্ণনা করেছেন। এই বর্ণনা বংশানুক্রমে যুগের পর যুগ ধরে অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা সহকারে চলে এসেছে। এ কারণে নবী করীম (স)-এর সুন্নাতের প্রতি ঈমান আনা ও রাখা একান্তই জরুরী এবং সে ঈমান অনুযায়ী সুন্নাতকে গৃহীত হতে হবে ইসলামের শিক্ষার আইন প্রণয়নের উৎস হিসেবে। বস্তুত ইসলামী আইন বিধানের জন্যে কুরআনের পরে পরে ও সঙ্গে সঙ্গে এই সনাতই হচ্ছে তার উৎস, তার ব্যাখ্যাকারী, বিস্তারিত বর্ণনাকারী, প্রতিটি বিষয়কে স্বতন্ত্র মর্যাদায় অভিষিক্তকারী এবং সুনির্দিষ্টকারী। মহান আল্লাহ সত্যই বলেছেনঃ
وانزلنا اليك الذكر لتبين للناس مال اليهم ولعلهم يتفكرون –
এবং আমরা তােমার প্রতি আল-কুরআন নাযিল করেছি, যেন তুমি-হে নবী লােকদের জন্যে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্য করে বলে দাও তা যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। তাতেই আশা করা যায়, তারা সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করবে। (সূরা নহলঃ ৪৪)
আবু দাউদ বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেনঃ হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা)-কে এক ব্যক্তি বললেন, “হে আবু নুজাইদ, আপনি কেন এমন কিছু হাদীস আমাদের নিকট বর্ণনা করেন, যার কোন ভিত্তি কুরআন মজীদে খুঁজে পাওয়া যায় না ?” এ কথা শুনে হযরত ইমরান রাগান্বিত হলেন এবং লােকটিকে বললেন, “প্রতি চল্লিশ দিরহামে এক দিরহাম বা এতটি ছাগী বাবদ এই-এই এবং এতটি উটের মধ্যে এতটি দিতে হবে, এসব কথা কি তােমরা কুরআন মজীদে পেয়েছ ?” বললে, না’ তা পাইনি।” বললেন, “হ্যা “কুরআনে তা পাওনি, তাহলে এসব কথা কোথেকে জানতে পারলে ?” তােমরা এসব কথা জানতে পেরেছ আমাদের নিকট থেকে এবং আমরা তা জানতে পেরেছি স্বয়ং নবী করীম (স) থেকে।” –বর্ণনাকারী বলছেন, এ পর্যায়ে সাহাবী আরও অনেক কয়টি জিনিসের উল্লেখ করেছেন।