“রিয়াদুস সালেহীন ১ম খণ্ড “বইটির প্রসঙ্গে কিছু কথা:
প্রায় সাড়ে চৌদ্দ শত বছর পরেও আল কুরআন সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত ও অবিকৃত অবস্থায় আমাদের সামনে রয়ে গেছে। ঠিক তেমনি হাদীসের ব্যাপারেও পরিপূর্ণ জোরের সাথে এ কথা বলা যায়। হাদীস বিকৃত করার বহুতর অপচেষ্টা চালানাে হয়েছে। কিন্তু উম্মতে মুহাম্মাদী অসাধারণ পরিশ্রম, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও ত্যাগের বিনিময়ে সত্য, নির্ভুল ও যথার্থ হাদীসগুলােকে বাছাই করে সংরক্ষিত রাখতে সক্ষম হয়েছে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মাত ছাড়া অন্য কোনাে নবীর উম্মাত তাদের নবীর সমগ্র জীবন প্রণালী, বাণী, কার্যক্রম, কর্মতৎপরতা এবং তাঁর প্রতি মুহুর্তের চলাফেরা, প্রতিটি পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত এমন নিষ্ঠা সহকারে নির্ভুলভাবে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেনি। রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবনকাল থেকে হাদীস লেখা হতে থাকে। তাঁর তিরােধানের দুই-তিন শত বছরের মধ্যেই সমস্ত হাদীস যাচাই হয়ে নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হয়ে আসে। প্রথম দিকে তাবিঈ ও তাবে-তাবিঈগণ বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিতে পৃথক পৃথক গ্রন্থাকারে হাদীস লিপিবদ্ধ করতে থাকেন। এগুলােকে জামে ও সুনান বলা হয়। এভাবে অনেকগুলাে মৌলিক হাদীগ্রন্থ রচিত হয়। এরপর একদল মুহাদ্দিস এগিয়ে আসেন। তাঁরা কেউ সাহাবীদের নাম অনুসারে হাদীসগুলােকে সাজান এবং এক একজন সাহাবী বর্ণিত হাদীসগুলােকে এক এক অধ্যায়ে স্থান দেন। আবার কেউ নিজের উস্তাদ অর্থাৎ সর্বশেষ রাবীর নাম অনুসারে হাদীসগুলাে সাজান। আবার একদল মুহাদ্দিস এক এক বিষয়ের হাদীসগুলাে এক একটি বিভাগে লিপিবদ্ধ করেন। এগুলােকে বলা হয় যথাক্রমে মুসনাদ, মু’জাম ও রিসালাহ। এগুলাে সবই হাদীসের মৌলিক গ্রন্থ। অতঃপর একদল মুহাদ্দিস বিভিন্ন নির্ভরযােগ্য হাদীস গ্রন্থ থেকে বিষয় ভিত্তিক হাদীস সংকলন করার কাজে আত্মনিয়ােগ করেন। এই সংকলনগুলির মধ্যে ইমাম নববীর রিয়াদুস সালেহীন অনন্য সাধারণ মর্যাদার অধিকারী।
রিয়াদুস সালেহীনের বৈশিষ্ট্য
ইমাম নববী (র) তাঁর দীর্ঘদিনের পরিশ্রম ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে এ গ্রন্থটি প্রণয়ন করেন। সিহাহ সিত্তাহসহ আরাে কয়েকটি প্রথম পর্যায়ের নির্ভরযােগ্য হাদীস গ্রন্থ থেকে তিনি এই হাদীসগুলাে আহরণ করেছেন। রিয়াদুস সালেহীনে কোননা প্রকার যঈফ হাদীসের স্থান নেই। এক একটি বিষয়ের হাদীসের জন্য এক একটি অনুচ্ছেদের শুরুতে প্রথমে উল্লেখিত বিষয় সম্পর্কিত আল কুরআনের বিভিন্ন আয়াত সংযুক্ত করা হয়েছে, তারপর উদ্ধৃত হয়েছে সেই বিষয় সম্পর্কিত প্রামাণ্য হাদীসগুলাে। হাদীসের শেষে হাদীসের নির্ভরযােগ্যতা কোন পর্যায়ের তা বর্ণনা করা হয়েছে এবং এই সংগে হাদীসের কিছুটা ব্যাখ্যাও সংযুক্ত করা হয়েছে।
আমাদের জীবনের দৈনন্দিন বিষয়গুলাে সম্পর্কিত চমকপ্রদ হাদীসগুলাে এমন যাদুকরী পদ্ধতিতে এখানে সংযােজিত হয়েছে যার ফলে সেগুলাে অধ্যয়ন করার সাথে সাথেই মনোেযােগী পাঠকের মনের গভীরতম প্রদেশে ব্যাপক আলােড়ন সৃষ্টি করে এবং কোনাে আগ্রহী পাঠক তার প্রভাব গ্রহণ না করে থাকতে পারেনা। অধ্যায়ের শুরুতে আল কুরআনের আয়াত এবং তারপর বিষয় সংশ্লিষ্ট হাদীসের বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, আল কুরআনের সাথে হাদীসের সম্পর্ক কত গভীর। হাদীস যে আল কুরআনেরই ব্যাখ্যা এ কথা সুস্পষ্টভাবে এখানে প্রমাণিত হয়। হাদীসের সাহায্য ছাড়া আল কুরআনের সঠিক অর্থ অনুধাবন করা