কিতাব আল-তাওয়াসিন সূফীবাদ ও মরমী চিন্তার ইতিহাসের সঙ্গে মনসুর আল-হাল্লাজকে তার যুক্তি-জিজ্ঞাসা ও তত্ত্বভাবনা সহ যুক্ত করে রেখেছে। এই গ্রন্থ ইসলামের আচারনিষ্ঠ ধারার সঙ্গে মরমী চিন্তধারার বিরােধ-বিবাদের অসারতাকে দেখিয়ে দেয় মর্মমুখী চিন্তার শুদ্ধতার শিখর থেকে। খ্রীস্টীয় দশম শতকের গােড়ার দিকে রচিত এ গ্রন্থে হাল্লাজ তার নিজের শহীদত্বকে অঙ্গীকৃত করেছেন সূফীবাদের তাত্ত্বিক কাঠামাের ভেতর। গূঢ়তত্ত্বের বিষয়গুলােকে প্রকাশ করতে রূপক-প্রতীক ব্যবহারের পাশাপাশি আশ্রয় নিয়েছেন বর্ণ-প্রতীক ও রেখাচিত্রের, গ্রন্থটিকে যা কাব্যের উচ্চতা দিয়েছে। যে সমস্ত বিষয় কেবল মমােপলব্ধির বিবেচ্য হাল্লাজ সেইসব বিষয়কে চিন্তা ও যুক্তিবােধের আওতায় এনেছেন। তাওহীদ ও সেই সম্পর্কিত সচেতনতা, স্বর্গীয় ইচ্ছা ও গুপ্তজ্ঞানের মতাে বিষয়কে ভাষাচিন্তার অধীনে এনে বুঝতে চেয়েছেন। গ্রন্থটিতে নব্যুয়ত, নবীতত্ত্ব, মানুষের জ্ঞানক্রিয়া, পরম বাস্তবতার উপলব্ধি, মরমী জ্ঞানের পথে ব্যক্তির নিঃসঙ্গতা ইত্যাদি বিষয়ের পাশাপাশি হাল্লাজ যুক্ত করেছেন ইবলিস সম্পর্কিত একটি তত্ত্ব। ইবলিস শাশ্বত সত্তার একত্বের ঘােষণা থেকে সরে আসতে চায়নি, তাই সে আদমকে সিজদা করতে অস্বীকার করেছে। কিন্তু স্বর্গীয় আদেশের মধ্যে স্ববিরােধ থাকতে পারে না। এই ভাবনা থেকে হাল্লাজ তাওহীদ সম্পর্কে একটি যৌক্তিক সংজ্ঞার দিকে গেছেন। দিয়েছেন ‘আমি’ ও পরমের সম্পর্ক, আত্মােপলব্ধি ও ব্যক্তিসত্তার সত্য-রূপ বিষয়ক তত্ত্ব। গ্রন্থটি থেকে হাল্লাজের বিখ্যাত উক্তি ‘আনা আল-হক্ক’-এর সঠিক তাৎপর্য বুঝতে পারা যায়। একই সঙ্গে সম্ভব হয়ে ওঠে প্রথাবাদীদের চিন্তার অসরতাকেও অনুধাবন করা।