স্বদেশের সমাজ ও রাজনীতি নির্ভর নানারকম ঢেউয়ের প্রতিক্রিয়া বরাবর চৈতন্যে ধারণ করেছেন আহমদ রফিক। এর প্রকাশ যেমন গদ্য রচনায় তেমনি কবিতায়। পঞ্চাশের দশকের শেষার্ধ থেকে ষাটের দশকের প্রথম দিকে তার লেখা কবিতার মুখ্য বিষয় উঠতি শহর ঢাকা ও অনাচারী মুৎসুদ্দি শ্রেণী (নির্বাসিত নায়ক)। আবার ঐ ষাটের দশকেই বাংলাদেশের মাটি মানুষ নিসর্গের প্রতি রূপমুগ্ধতার মমতাময় চিত্রণ ‘বাউল মাটিতে মন’ কবিতা সংকলনে। সেই নম্র গভীর উচ্চারণ পেরিয়ে একাত্তরের পাক বর্বরতার দৃশ্যচিত্রণ ও প্রতিবাদী সংগ্রামের উচ্চারণ ‘রক্তের নিসর্গে স্বদেশ’-এর পঙক্তিমালায় পরিস্ফুট। সেখানে রয়েছে বাঙালির বলিষ্ঠ আকাক্সক্ষার প্রকাশ ‘বর্শায় গাঁথো লোমশ দাঁতাল/হায়েনা ও নেকড়ে’র মত পঙ্ক্তি। কিন্তু মুক্ত স্বদেশে পৌঁছেও শান্তি মেলে নি। মিলেনি অন্বিষ্ট। দুই দশকের নৈরাজ্য স্বৈরাচার তাকে হতাশ করেছে। সে হতাশার শৈল্পিক অভিব্যক্তি তিক্ত প্রতিবাদে ও সমাজ পরিবর্তনের আকাক্সক্ষায় যা পরিস্ফুট ‘বিপ্লব ফেরারী, তবু’ সংকলনে।
এর পর হতাশার যন্ত্রণা নিয়ে পথ চলতে সময়, সমাজ ও নিসর্গ-নির্ভর খন্ড অনুভূতির প্রকাশ ‘পড়ন্ত রোদ্দুরে’র কবিতায়। সমাজ ও জীবন বাস্তবতার ‘স্যাটায়ারিক’ রূপচিত্র চৌপদী ও ষটপদী অণুকবিতার সংকলন ‘ভালোবাসা ভালো নেই’, নামেই যার চরিত্র প্রকাশ। প্রেম ভালোবাসাসহ নানা অনুভূতির ছন্দিত প্রকাশ বিচ্ছিন্ন পঙ্ক্তিমালায়। আর প্রেম অপ্রেমের আদ্যন্ত ব্যবচ্ছেদ ‘ইচ্ছামতীর ঘরে’ কবিতা সংকলনে। আহমদ রফিকের প্রায় ষাট বছরের স্বল্পায়তন কাব্য পরিক্রমার পরিচয় মিলবে কবিতাসমগ্র গ্রন্থে।