ফ্ল্যাপে লিখা কথা
নজরুল আমাদের জাতীয় কবি। তিনি জাগরণের কবি, বিদ্রোহের কবি। মানবতার কবি, শোষিত বঞ্চিতদের কবি। তারুণ্যের কবি, সাম্যের কবি। প্রেমের কবি, গানের কবি। তাঁর লেখার ফুটে উঠেছে দ্রোহ, সাম্য, মানবতা, প্রেমের ছবি। কবির ক্ষুরধার লেখনী শাসকের মসনদের ভিত কাঁপিয়েছে, চির বঞ্চিতদের দেখিয়েছে আশার আলো। কবি ধর্ম বর্ণের উর্ধ্বে উঠে মানবতার জয়গান গেয়েছে, নারীর অধিকারকে করেছেন সমুন্নত। তাঁর সৃষ্টি সর্বজনের এবং সর্বকালের জন্য প্রযোজ্য। এটাই তাঁর অনন্য বৈশিষ্ট্য। নজরুলের সৃষ্টি সম্পর্কে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘…… জনপ্রিয়তা কাব্য বিচারের স্থায়ী নিরিখ নয়, কিন্তু যুগের মনকে যা প্রতিফলিত করে, তা শুধু কাব্য নয়, মহাকাব্য।’ কবির সৃজনশীল কর্ম বাংলা সাহিত্যে তো বটেই, বিশ্বসাহিত্যেও বিরল। কবির বিচরণ যে বিশ্বব্যাপী তা আমরা তাঁর উক্তি থেকেই পাই। কবির ভাষায়, ‘আমি এই দেশে এই সমাজে জন্মেছি বলেই শুধু এই দেশের এই সমাজের নই। আমি সকল দেশের সকল মানুষের। …… যে কুলে, যে সমাজে, যে ধর্মে, যে দেশেই জন্মগ্রহণ করি, সে আমার দৈব। আমি তাকে ছাড়িয়ে উঠতে পেরেছি বলেই কবি।’ এখানেই কবির বিশ্বজনীনতা।
বাঙালি জীবন আর বাংলা সাহিত্যে কালবৈশাখি ঝড়ের মতোই নূতনের কেতন উড়িয়ে আমাদের জাতীয় কবি, বিদ্রোহী কবি, মানুষের কবি কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব। তিনি আমাদের চিন্তা-চেতনার সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছেন। যে কোনো দুর্যোগ, সংকটে ও আনন্দ-বেদনায় নজরুলের জীবন ও কর্ম আমাদের প্রেরণা ও সাহস যোগায়। আমরা প্রতিনিয়ত তাঁর সাহিত্য থেকৈ উজ্জীবিত হই, অনুপ্রাণিত হই। তাঁর অমূল্য সাহিত্য সম্ভার আজ আমাদের গর্ব ও সম্পদ। তাঁর লেখনী থেকেই আমরা বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা পেয়েছে। নজরুল তাঁর সৃষ্টির বৈচিত্রে ও নানামাত্রিক বৈশিষ্ট্যে বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখাকে নব নব ভাব ও আঙ্গিকগত উদ্ভাবনায় সমৃদ্ধ করেছেন। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক মহান উত্তারাধিকার কাজী নজরুলের অমর সৃষ্টি সম্ভার।