ইতু বৌদির ঘর

৳ 125.00

লেখক
প্রকাশক
ভাষা বাংলা
দেশ বাংলাদেশ

ভারত বিভাগের পরবর্তী সময়। অস্তিত্ব রক্ষা ও স্থিতির জন্যে দুই দেশেই চলছে তখন মানুষের লড়াই। এ উপন্যাসের কয়েকটি চরিত্রও এই তাড়িত মানুষ। এদের কেউ স্থায়ী, কেউ বিদ্রোহী কবির চুরুলিয়া থেকে আসা। এই গল্পের কথকও এসে নামে ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশন। ঘোড়ার ক্ষুরের ধ্বনি কান ছুঁয়ে মরমে প্রতিধ্বনি তোলার সেই সূচনা। প্রতীকি সূচনা ‘ইতু বৌদির ঘরে’র। ঢাকা তখন নতুন দেশের প্রাদেশিক রাজধানী। বিস্ময়ের দরজাগুলি খুলে যেতে থাকে উত্তমপুরুষের। চুরুলিয়ার লেখক শেখ আবু রায়হান ওমর, বন্ধু-অন্তপ্রাণ হেদায়েত-উর রহমান ও উত্তমপুরুষ ঘোড়ার গাড়িতে ঘোরার চক্রে পড়ে একসময় আবিষ্কার করে প্রাচীন সেই বাড়ি। সুচিত্রা সেনের শ্বশুরালয় ‘সেন নিবাস’।
‘ইতু বৌদির ঘর’ উপন্যাসটির পটকেন্দ্র এই বাড়ি। মনোজগতের আলো-আঁধারি এবং মন বিনিময় এখানেই শুরু। উত্তমপুরুষ বুলবুল চৌধুরী-চরিত্রে তাই ভিন্ন ধারা পরিলক্ষিত। কারণ লেখক হয়ে ওঠার তীব্র আকাক্সক্ষায় তিনি গোপন করেননি নিজেকে। অবলোকন করেন নির্লিপ্ততায় লেখক শেখ আবুল রায়হান ওমরকে। কেন আত্মহননই তার জরুরি ছিল! পাশাপাশি দেখা হয় ‘সেন নিবাসে’র উত্তরসূরি দেবাশীষকে, যে ভালোবাসার মেয়ে মিতুয়ারী দাসকে নিয়ে পালাতে গিয়ে মাঝপথে পৌঁছে দেখে ‘ভুল-মানুষ’ উঠে এসেছে গাড়িতে। এ যে প্রেমিকার যমজ বোন ইতুয়ারী দাস।
বদলে যেতে থাকে দেবাশীষ। তাই ‘সেন নিবাসের’র পুত্রবধূ হিসেবে ইতু স্বীকৃতি ও মর্যাদা পেলেও না-পাওয়ার হাহাকার নিয়ত দীর্ঘ হয়। সমাজপুরুষ ও পরমপুরুষ দ্বন্দ্ব তার মধ্যে জায়মান। তবু অবচেতন সে সাধন করতে চায় উত্তমপুরুষের হৃদয়। সরল স্বীকারোক্তিও অসামান্য কালো ওই বউটির কণ্ঠে, ‘পরজনমে তোমাকে চিনবো কেমনে বুলবুলদা?’
দেশে হঠাৎ মুক্তিযুদ্ধ শুরু। বাংলাদেশ স্বাধীন করার ওই জীবনমরণ পর্বে যূথবদ্ধ মানুষের বিচ্ছিন্ন হওয়ার পালা। অনেক প্রশ্নেরই মীমাংসা হয়নি। চুরুলিয়ায় ফেলে আসা লেখকের মানসকন্যা আরতির মুখচ্ছবি বিস্মরণের পর্দায় কোনোদিনই ঢাকতে পারল না উত্তমপুরুষ। তাছাড়া দেবাশীষ, তার বোন অতসী কিংবা ইতুয়ারী দাসের ক্ষেত্রেও কী-ইবা সমাপন। মনোজগৎ বাস্তবতা। যুদ্ধ শেষে বিজয় এলো। কিন্তু কাউকে আর পাওয়া গেল না ‘সেন নিবাসে’। জীব-রহস্যের অনেক মীমাংসা যেমন কখনো মেলে না, যাপিতজীবন তেমনই এক জটিল সমীকরণ। মনোজগতের চিত্রার্পিত ‘ইতু বৌদির ঘর’ তাই হয়ে ওঠে সমীকরণ। মীমাংসায় সার্থক এবং ভিন্ন এক কৃত্য।

কথাসাহিত্যিক বুলবুল চৌধুরী ১৯৪৮ সালের ১৬ আগস্ট গাজীপুরের দক্ষিণবাগ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সত্তর দশকে তার ‘টুকা কাহিনী’ নামক গল্পটি প্রকাশ পাওয়ার পর সবার দৃষ্টি পড়েছিল এই নতুন লেখকের দিকে। শুরুতেই প্রতিশ্র“ত নয়, পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত গল্পকার হিসেবে আবির্ভূত হন। নগরের নানা রেখা-উপরেখা ছুঁয়ে গেলেও গ্রামীণ অভিজ্ঞতায় তার প্রধান অবলম্বন খোলা চোখে প্রবহমান জীবন দেখা। সেই জীবনের ভেতর দিয়ে বুলবুল চৌধরী ঢুকে পড়েছেন মানুষের অন্দর মহলে। প্রাণস্পর্শী দরদ দিয়ে তাদের তিনি বিন্যস্ত করেছেন সাহিত্যে। কথাসাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘কহকামিনী’ নামে উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার। ২০১১ সালে কথাসাহিত্যের জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। ২০১৩ সালে ‘এই ঘরে লক্ষ্মী থাকে’ নামক উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন ব্র্যাক ব্যাংক ও সমকাল সাহিত্য পুরস্কার। তাঁর প্রকাশিত ছোট গল্পগ্রন্থগুলো হলো ‘টুকা কাহিনী’, ‘পরমানুষ’, ‘মাছের রাত’ ও ‘চৈতার বউ গো’। উপন্যাস ‘অপরূপ বিল ঝিল নদী’, ‘কহকামিনী’, ‘তিয়াসের লেখন’, ‘অচিনে আঁচড়ি’, ‘মরম বাখানি’, ‘এই ঘরে লক্ষ্মী থাকে’, ‘ইতু বৌদির ঘর’ এবং ‘দখিনা বাও’। আত্মজৈবনিক দুটি হল ‘আঁকিবুঁকি’ ও ‘অতলের কথকথা’। তাছাড়া ‘গাঁওগেরামের গল্পগাথা’, ‘নেজাম ডাকাতের পালা’, ‘ভালো ভূত আর প্রাচীনগীতিকার গল্প’ নামক কিশোর গ্রন্থের রচয়িতাও তিনি। ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২১ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।


বই সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা বা মতামত থাকলে আমাদেরকে জানান
শেয়ার করুন

লেখকের অন্য বইসমূহ