১৬৩১ সাল, ভগ্নহৃদয় মোগল সম্রাট, শাহজাহান, তার প্রিয়তমা স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে উজ্জ্বল দীপ্তিময় আর জাকজমকপূর্ণ একটা স্মৃতিস্তম্ভ (মকবরা) নির্মাণের আদেশ দেন। তাদের প্ৰেম অসাধারণ আবেগের এক অপূর্ব কাহিনী: যদিও তিনি প্রায় সবসময়েই সন্তানসম্ভবা থাকতেন তারপরেও মমতাজমহল প্রতিটা সামরিক অভিযানে তার স্বামীর সঙ্গী হয়েছেন, যার একটাই উদ্দেশ্য তারা যেন কখনও একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন না হন ।
কিন্তু মমতাজ সহসাই সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন, শোকে অন্ধ শাহজাহান নদী যমুনার তীরে তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটা উদ্ধত কিন্তু অসাধারণ স্থাপত্য কীর্তি সৃষ্টি করেন। ক্রুটিহীন প্রতিসাম্যের দীপ্তিময় একটা মকবরা তাজমহল নির্মাণে সফেদ মর্মর আর গোলাপী বেলেপাথর এবং মূল্যবান রত্নরাজির বৈভবখচিত একটা অলঙ্করণ ব্যবহৃত হয়েছে। বিশ হাজার শ্রমিকের শ্রম আর মোগল কোষাগারের সম্পদ স্থান করে মকবরার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে প্রায় বিশ বছর সময় লেগেছিল। কিন্তু শাহজাহানকে তার এই আবিষ্টতার জন্য আরো বড় মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছিল। আগ্ৰা দূর্গে নিজের সন্তান কর্তৃক অন্তরীণ অবস্থায়, নদীর অপর তীরে অবস্থিত প্রিয়তমার সমাধিসৌধের দিকে তাকিয়ে, তিনি জীবনের শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করেন। তাজমহল ভাইকে ভাইয়ের বিরুদ্ধে, পুত্রকে পিতার বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেয় যা সতের শতকের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যকে অপরিবর্তনীয় অধঃপতনের দিকে নিয়ে যায় ।
তাজমহলের অন্তরালের কাহিনীর মাঝে রয়েছে গ্রীক বিষাদের চন্দোলয়, জ্যাকোবীয় প্রতিশোধস্পৃহার সংহার রূপ এবং গ্রান্ড অপেরার আবেগময়তা| তাদের পূর্ববর্তী কাহিনীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কথকের দক্ষতা আবেগময় বিবরণমূলক ইতিহাসের এই কাহিনীতে অ্যালেক্স রাদারফোর্ড (ডায়ানা আর ইকেল প্রেসটন) প্রদর্শনে সমর্থ হয়েছেন যেখানে মর্মরের খ্যাতিমান স্থাপত্যের সেরা নিদর্শনে তারা মানবিক মুখাবয়ব আরোপ করেছেন।