মহান রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন আমাদের জাতীয় ইতিহাসের মাইলফলক হিসেবে স্বীকৃত। রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমাদের জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটে এবং বাঙালি জাতিকে স্বাধিকার অর্জনে উদ্বুদ্ধ করে। দেশ বিভাগের পরপরই শুরু হওয়া মহান রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের পথ বেয়ে ১৯৭১ সালে অর্জিত হয় বহু কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। ইতিহাসের এই ঘটনা-প্রবাহে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রয়েছে বিশাল ও বিরল অবদান। তিনি আমাদের মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবিচল নেতৃত্ব দিয়েছেন।
রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনকে অনেকেই শুধুমাত্র ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াই হিসেবে দেখেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিরাজমান অবস্থা, প্রেক্ষাপট, আর্থ-সামাজিক বাস্তবতার সামগ্রিকতায় রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের অন্তর্নিহিত শক্তিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদের খাতে প্রবাহিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন। ১৯৫৩ সালে একুশের প্রথম বার্ষিকী পালন, ১৯৫৪-তে নির্বাচন, ১৯৫৫ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সাথে সাথে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসন দাবি এবং ১৯৫৬ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রশ্নে পাকিস্তান গণ-পরিষদে প্রতিবাদী বক্তব্যের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিকে জোরদার করেন। পরবর্তীকালে ভাষার লড়াই রাজনৈতিক লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর গতিশীল নেতৃত্বে নানা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদ, স্বাধীন স্বতন্ত্র সার্বভৌম বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলন বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে গবেষক এম আর মাহবুব যে তথ্যবহুল গ্রন্থটি রচনা করেছেন তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। উক্ত বইটিতে রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর যথার্থ ভূমিকাকে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন।