ফ্ল্যাপে লিখা কথা
পুরুষের কামনারাজ্যে নারী এক সোনালি ক্ষুধার নাম, এক পত্রপুষ্প সুশোভিত গভীর উদ্যান, তৃষ্ণা উদ্রেককারী মাংসপুঞ্জ।পুরুষময় পৃথিবীতে নারীকে বাঁচতে হয় এক ক্ষুধার্ত জনপদে, পুরুষের খাদ্য হয়ে ওঠার ভয়কে সঙ্গী করে। ফলে নারীর কাছে পুরুষ মাংসাশী প্রাণীরূপে প্রতীয়মান হয়েছে , তাঁর আতঙ্কিত মানসচক্ষে মাদ্রাসার গোলটুপি, সড়ক ও শপিংমল , রাত্রির পুলিশভ্যান, প্রেমিক, এমনকি রাষ্ট্রও মাংসাশী। পুরুষসভ্যতার অভব্য আচরণে, সর্বগ্রাসী ক্ষুধার আঁচড়ে ও রাষ্ট্রযন্ত্রের যাঁতাকলে পিষ্ট নারী তার মাংসের শত্রুতা নিয়ে ছুটছে সুচ বিছানো রাস্তায়। শেলী নাজ তাঁর কবিতায় পরিবার কাঠামোয় অস্তিত্ব সংকটে পীড়িত নারী আর্তচিত্র উন্মোচনের পাশাপাশি শোনাতে চেয়েছেন নারীতন্ত্রের স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। চির মাতৃমূর্তি ভেঙে তাঁর কবিতার নারী হয়ে উঠতে চেয়েছে সার্বভৌম, ক্রিয়াশীল, স্বতঃস্ফূর্ত, ট্যাবু যারা হাওয়ালোভী জানালা রুখতে পারেনে, রজ্জু ছিঁড়ে, কবাট উপড়ে যে জীবন যাপন নয় জীবন উদ্যাপন করে। তিনি পাল্টে দিতে চেয়েছেন পুরুষসৃষ্ট নারীরধারণা, তাঁর কবিতার ভূমণ্ডলে হরিণী শিকার নয় আবির্ভূত হয়েছে শিকারির ভূমিকায়, এখানে রাধার ষোলশ কৃষ্ণ আর পুরুষ মৎস্যরূপে ধরা পড়ে জেলেনির জালে। নানা অভিঘাত ও অভিলাষে চূর্ণবিচূর্ণ হতে হতে তাঁর কবিতায় নারীর মন ও মাংস কথা বলে উঠেছে এমন এক ভাষায়, যা শোনার জন্য এখনো প্রস্তুত নয় পুরুষতন্ত্রের শ্রবণেন্দ্রিয়।
শেলী নাজের কবিতার শরীর ছন্দময়। তাঁর শব্দমঞ্জির পুরুষতন্ত্রকে কেন্দ্র করে হয়ে ওঠে ঝাঁঝালো, উদগ্র, ও আক্রমণাত্নক। তাঁর প্রকাশভঙ্গি ও বিষয়ভাবনা স্বতন্ত্র, সাবলীল ও নতুন। পুরুষের পীড়নের কথা লিখতে গিয়ে পড়েছেন পুরুষের প্রেমে, লিখেছেন প্রেমাতুর পঙ্ক্তিগুচ্ছও।