ভূমিকা
পিকাসো মেয়েদের হয় দেবী, নয়তো পাপোশ ভাবতেন ফ্রাঁসোয়া জিলোর এই মূল্যায়ন সম্ভবত মোটেই অতিরঞ্জিত নয়। অথচ এ-কথাই বা কী করে অস্বীকার করি, তাঁর শিল্পীজীবনে সবচেয়ে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব এসেছে প্রধানত মেয়েদের কাছ থেকে। ব্যক্তিজীবনে মায়ের প্রভাবের কথা পিকাসো তাঁর ছবিতে ছাড়াও নানাভাবে প্রকাশ করেছেন, মায়ের নাম ‘পিকাসো’ গ্রহণ তার একটি। তাঁর শ্রেষ্ঠ চিত্রকর্মসমূহের বিষয় নারী নারীর দেহ, তার কামজ মাদকতা ও সম্মোহনী ইন্দ্রজাল। এমনকি যখন সে নারীর দেহ ভাংচুর করে তাকে বিকৃত করেছেন, তখনো আমাদের কাছে সে এক নিষিদ্ধের আমন্ত্রণবার্তা বয়ে এনেছে।
যেসব নারীকে তিনি স্ত্রী অথবা প্রেমিকা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, তাঁরাই পিকাসোর অধিকাংশ ছবির বিষয়বস্তু। নারীদেহের প্রতি তাঁর ক্ষুধা ছিল অফুরান। অথচ যে-মুহূর্তে সে-দেহের প্রতি আগ্রহ ফুরিয়েছে, অমনি পিকাসো তাকে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছেন। নারীর প্রতি পিকাসোর বৈপরীত্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি একই সঙ্গে প্রেম ও ঘৃণা তার ব্যাখ্যা নানাজন নানাভাবে করেছেন, তাঁদের মধ্যে কার্ল ইয়ুংও আছেন। এই গ্রন্থে আমাদের লক্ষ্য পিকাসোর জীবনে তিন রমণীর প্রভাব শুধু তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে নয়, ছবিতেও তার অনুসরণ। পিকাসোর অধিকাংশ ছবিই আত্মজৈবনিক। ফলে তাঁর জীবনের ঘটনাবলির সঙ্গে পরিচিত না হলে সে ছবির রস পুরো উপভোগ করা কঠিন। নিউইয়র্কে দুটি সাম্প্রতিক চিত্র-প্রদর্শনী ও পিকাসোর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে লিখিত একটি স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থের ভিত্তিতে গ্রন্থভুক্ত তিনটি আলোচনা প্রস্তুত হয়েছে। আমি পেশাদার শিল্পসমালোচক নই, পিকাসোর ছবির গুণাগুণ নিয়ে আলোচনার পথে আমি যাইনি। শুধু আমার মুগ্ধতার কথাটাই জানিয়েছি। সঙ্গে, গল্পচ্ছলে উদ্ধারের চেষ্টা করেছি বিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাবশালী এই চিত্রকরের জীবনে এই তিন রমণীর উপস্থিতির বিবরণ।
কালি ও কলমের সম্পাদক আবুল হাসনাত ব্যক্তিগতভাবে উৎসাহ না দিলে প্রবন্ধ তিনটি লেখা হতো না। তাঁর কাছে আমার ঋণের শেষ নেই। এই গ্রন্থ প্রকাশের ফলে সে ঋণের বোঝা আরো বাড়ল। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে কাইয়ুম চৌধুরীর প্রতি। আশৈশব তাঁর আঁকা প্রচ্ছদ দেখে মুগ্ধ হয়েছি। কবিতা ও চিত্রকলার মধ্যে একটি মৌলিক সম্প্রীতি আছে, তাঁর ছবি দেখে এমন বোধ দীর্ঘদিন থেকে অনুভব করেছি। পিকাসোর ওপর এই বই, তা যেমনই হোক, তাঁকে উৎসর্গ করে ভালো লাগছে।