জওহরলাল নেহরু কারাবাসে করেন দীর্ঘদিন। কারাবাসের দিনগুলো তাঁর নিজের জন্য দুর্বহম ও ক্লেশকর ছিল ঠিকই, তবে ওই অসহ বন্দী জীবনে থেকেই তিনি রচনা করেন গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বই। এমন তিনটি গ্রন্থ তিনি বিভিন্ন পর্বের কারাজীবনের অন্ধকার অন্তরালে বসে রচনা করেছেন , যার প্রত্যেকটি ধারণ করে আছে চিরকালের আলোকদীপ্তি। ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’ ওই তিন দারুণ গ্রন্থেরই একটি । আহমদনগর দুর্গের কারাশিবিরে বন্দি জীবনযাপনকালীন সময়ে লেখা এই গ্রন্থ ইতিহাসচর্চার পৃথিবীতে নতুনরকম আলোকপাত করে। সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে যে বিরাট উত্তরাধিকার ভারতের মতো প্রাচীন এক ভূখন্ডে, জন্মসূত্রে, জনগনের উপর বর্তেছে, তিনি শুধু তারইস্বরূপটি নতুন করে আবিষ্কার করেননি এইমহাগ্রুন্থে, একই সঙ্গে সমকালীন ভারতের ওপর এই মহান সংস্কৃতির প্রভাবটিকেও করাতে চেয়েছেন অনুভব গোচর। চেয়েছেন, ভবিষ্যৎ ভারতের আদর্শ ও ভাবমূর্তি সম্পর্কেও একটি স্বচ্ছ ধারণা দাঁড় করিয়ে দিতে। আত্নজীবনীর মতো নিঃসঙ্কোচে কথনে পূর্ণ এই বই কথা সাহিত্যের মতো আকর্ষণীয় ও স্বাদু। বইটি দিনলিপি আকারে রচিত, যে দিনলিপিগুলি ধারণ করে আছে জওহরলালের ভারতচিন্তা ও ইতিহাস ভাবনা। ইতিহাসচর্চা ওযে আত্নচর্চার অঙ্গ, ইতিহাস সন্ধান যে আত্নানুন্ধান, ব্যক্তি ও ইতিহাস যে পরম্পর সম্পৃক্ত-ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী জওহরলাল সেই তত্ত্বটিকেই এই বইয়ে সূচিত ও প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।