পূর্বাভাষ
ভারত কখনও দেশ বিভাগ ও তৎকালীন পাকিস্তান মেনে নেয়নি। স্বাধীন ভারতীয় প্রশাসনের একটাই লক্ষ্য ছিল, কি করে পাকিস্তানের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে রাখা যায়, যাতে আতুর ঘরেই এর অপমৃত্যু ঘটে। সুযোগমত যেন এই শিশু রাষ্ট্রটির টুটি টিপে দমরুদ্ধ করা যায়। চাই সেটা সন্ত্রাসের মাধ্যমে হোক কিংবা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, আভ্যন্তরীণ কোন্দল বা সৈন্য মার্চ করেই।
১৯৪৭-এর আগস্টেই সশস্ত্র হিন্দু ও শিখ জাতি প্রশাসনের ছত্রছায়ায় জিঘাংসা পূর্ণ মনোবৃত্তি নিয়ে পূর্ব পাঞ্জাবে নামল। পরে দিল্লী, আজমীর, ইউপি, উত্তর ভারত ও ভরতপুর থেকে জন্মু-কাশ্মীরের পার্বত্যাঞ্চলেও ওই রক্তবন্যা বয়ে চলল। স্বপ্নেও যারা কিয়ামতের কথা ভাবেনি, শতাব্দীকাল ধরে যারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করছিল-পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল তারা। সামাজিক বন্ধন টুটে গেল। লাখো ইনসান পৌছে গেল মৃত্যুর দুয়ারে। হাজারো নিঃস্ব পরিবার তৎকালীন পাকিস্তানের পথ ধরল। এদের খুন ও আঁসু দিয়েই পাকিস্তানের ভিত্তি রচিত হয়েছিল।
এ সেই ভুলে যাওয়া ইতিহাস নসীম হিজাযীর দুঃসাহসিক কলম যা ‘রক্তাক্ত ভারত’ শীর্ষক উপন্যাসে লিপিবদ্ধ করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এই উপন্যাস কেবল ৪৭-এর রক্তস্নাত কাহিনী শুনিয়ে পাঠকের চোখের পানি ফেলতে নয় বরং এটা লেখার উদ্দেশ্য, নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে শিখানো।
দেশ বিভাগের আগে ও পরে থেকে নিয়ে অধ্যাবধি আমাদের স্বাধীনতা ও শান্তি-স্থিতিশীলতা বানচালকারীর একটাই অভীষ্ট লক্ষ্য-অখণ্ড ভারত। যার ছত্রছায়ায় উপমহাদেশে হিন্দু কৃষ্টি-কালচার ও পৌত্তলিক প্রজন্মের উন্মেষ ঘটানো যায়। এই কাপালিক লক্ষ্যে ওরা এক মূহূর্তও নষ্ট করতে নারাজ
ইসলামী শাসন ব্যবস্থায় একটি ইনসাফী রাষ্ট্র কায়েম করার স্বপ্ন দেখেছিল উপমহাদেশীয় মুসলিম মনীষীবৃন্দ। তাদের সেই চেতনাকে পুঁজি করে রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে আমরা সাফল্যভরে উতরে ৪৭-এর রক্তলাল শোক ভুলতে চেষ্টা করব। রক্ত আখরে লেখা ৪৭-এর ইতিহাস আমাদের সমৃদ্ধ মুসলিম রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয়দৃপ্ত অঙ্গীকার।
শেষকথা, নসীম হিজাযীর আবেদন সারা বিশ্বে ব্যপক পতন যুগের ইতিহাস বর্ণনা করায় তার ক্ষুরধার লেখনি তৃষিত মনের পিয়াস মেটায়। এজন্য আমার তার এ বইসহ সপ্রকাশিত বই ছাপার আপ্রান চেষ্ট করছি। যা চেতনা যোগাবে। বইটি অনুবাদ করেছেন প্রথিতযশা নবীন অনুবাদক জনাব ফজলুদ্দীন শিবলী। মুদ্রণ প্রমাদের জন্য আগাম মাফ চেয়ে নিচ্ছি।