“হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ” বইটির গ্রন্থের উদ্দেশ্য অংশ থেকে নেয়াঃ
বর্ণনামূলক ও জ্ঞানগত বিদ্যার ওপর সেকালে ও একালে বহু বই লেখা হয়েছে। প্রত্যেক মনীষীই জ্ঞান-গবেষণার ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অবদান রেখেছেন। ইসলামের প্রথম যমানায় যুক্তি-বুদ্ধি চর্চার তেমন প্রাধান্য ছিল। সে যুগে বর্ণনামূলক বিদ্যারই সর্বাধিক চর্চা চলছিল এবং এটাকেই। তখন যথেষ্ট মনে করা হত। মুসলিম জাহান তখন রাসূলে করীম (সঃ)-এর কাছাকাছি যমানায় লালিত হচ্ছিল। তাই রাসূল (সঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের ফয়েজ ও বরকতের প্রভাবে হাজারাে দর্শনের দার্শনিক মার প্যাঁচ তাদের প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়নি। তবে যতই ইসলামী দুনিয়ার প্রসারতা বেড়ে চলল আর এমনকি ইরান, হিন্দুস্তান ও পাশ্চাত্য জগতের বিভিন্ন এলাকায় যখন তা ছড়িয়ে পড়ল, তখন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দার্শনিকদের দুষ্ট প্রভাব মুসলমানদের সহজ সরল ঈমান ও আকায়েদের যুত ভিত্তিকে দুর্বল করে দিল।
ফলে আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের দ্বীন ও ঈমানের হেফাজতের জন্যে এমন ব্যক্তিত্বের এ পৃথিবীতে আবির্ভাব ঘটালেন যাঁরা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দার্শনিকদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে তাদের স্তব্ধ করে দিলেন। তারা শুধু ইসলামের জন্যেই প্রাচীর হয়ে দাঁড়ালেন না, পরন্তু দার্শনিকদের ভ্রান্ত চিন্তাধারার কল্পনার ফানুস ছিন্ন ভিন্ন। করে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলেন। ইসলামের ওপর বারংবার হামলা করেছে। কিন্তু তাদের ভাগ্যে লাঞ্ছনাকর পরাজয় ভিন্ন আর কিছুই জোটেনি। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মােহাদ্দেসে দেহলভী (রঃ) ও তাঁর হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগার আবির্ভাব ও সৃষ্টির পেছনে আল্লাহ পাকের সেই মর্জিই সক্রিয় ছিল।
শাহ সাহেব (রঃ) এ গ্রন্থটিতে শরীয়তের রহস্যাবলী তুলে ধরেছেন। পূর্বসুরীদের কেউই এ বিষয়ের ওপর কলম ধরেননি। শাহ সাহেব (রঃ) শরীয়তের মূলনীতি দাঁড় করেছেন, তার শাখা-প্রশাখা বর্ণনা করেছেন। যদিও গ্রন্থখানি শরীয়তের রহস্যাবলীর ওপর তিনি লিখেছেন, তথাপি তিনি তাতে হাদীস, ফিকাহ, আখলাক, তাসাওফ ও দর্শনের সমারােহ ঘটিয়েছেন। উম্মতের ভেতর তিনিই প্রথম বর্ণনামূলক ও জ্ঞানগত বিদ্যার বিশেষজ্ঞ, যিনি শরীয়তের রহস্য বর্ণনা করতে গিয়ে শুধু জ্ঞানানুসন্ধানের পথ বেছে নিয়েছেন। তিনি কিতাব ও সুন্নাতের প্রতিটি নির্দেশের এরূপ অনড় কারণ খুজে বের করেছেন যা কোন যুগেই কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। গ্রন্থটি পাঠ করতে গিয়ে মনে হয় জ্ঞান ও যুক্তি শাস্ত্রের সকল স্তর আয়ত্তকারী এক বিশাল ব্যক্তিত্ব কথা বলেছেন। কখনও মনে হয়, মালায়ে আলার ইলহাম পেয়ে অধ্যাত্মিকতার বর্ণনা দিচ্ছেন।
কখনও দেখা যায় যে, এক মুজতাহিদ এমন ভাবে মসআলা পেশ করছেন যাতে চার মজহাবের সমম্বয় ঘটে যাচ্ছে। এমনকি কিতাব ও সুন্নাতের বক্তব্যের সাথে তা হুবহু মিলে যাচ্ছে। | আল্লামা আবু তাইয়্যেব (রঃ) “হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ” সম্পর্কে বলেনঃ “যদিও গ্রন্থটি ইলমে হাদীস নয়, তথাপি তাতে হাদীসের প্রচুর ব্যাখ্যা মিলে। এমনকি তাতে বিভিন্ন হাদীসের তত্ত্ব ও রহস্য উদ্ঘাটিত হয়েছে। সে যাক, পূর্ববর্তী বার শতকে আরব-আজমের কোন আলেম এরূপ মহামূল্যবান গ্রন্থ রচনা করে যাননি। গ্রন্থটি এ বিষয়ে অনন্য। মােটকথা, গ্রন্থকারের এটা শুধু শেষ্ঠ গ্রন্থই নয়, সর্বকালের একটি শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ।” শাহ সাহেব (রঃ) তার গ্রন্থটিকে দু’খণ্ডে বিভক্ত করেছেন। পয়লা খণ্ডটি সাত অধ্যায়ে বিভক্ত করেছেন। প্রতিটি অধ্যায় কয়েকটি পরিচ্ছেদে ভাগ করেছেন।