আমি যদি তানপুরা হতাম, তবে দোকানে দিয়ে আমার খােলনলচে বদলে, নতুন করে রঙ করে, মরচে-পড়া তার-টার সব বদলে নিলে আমি হয়তাে আবার কোনাে সুন্দর সুর-সােহাগী আঙুলে দারুণ বাজতাম। কিন্তু আমি যে একজন মানুষ। আমার খােল-নচে বদলাবার, নিজেকে নতুন করে রঙ বা বার্নিশ করার উপায় নেই কোনাে।
বাবা অবস্থাপন্ন ছিলেন। ছেলেবেলায় বড়লােকীর মধ্যে মানুষ হয়েছিলাম। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর আমরা গরিব। বাবার অন্য অনেক ব্যবসার মধ্যে একটা চা-এর দোকান ছিল, ভাল রাস্তায়, ভাল পাড়ায়; দাদা সেই দোকানে সকালে-বিকেল যায়—দুপুরে পড়ে পড়ে ঘুমােয়। দোকানদারিতে যে ব্যবহারের চাকচিক্য লাগে ও সদাসর্বদা জাগ্রত দৃষ্টির দরকার হয় আমার ঘুমকাতুরে দাদার তার কিছুই ছিল না।
আমার বৌদি খুব ভাল। সুন্দরী, সুরুচিসম্পন্না; ভারি ভাল মেয়ে। আমার দাদার হাতে পড়ে বৌদির বড়ই হেনস্তা। তার কোনাে সখই এ জীবনের পূরণ হয়নি। হবেও না। আমার বৌদির সঙ্গে আমার একটা বাবদে মিল ছিল। রুচির বাবদে। চরিত্রের নরম দিকটার বাবদে। ফলে, ভ্যাগাবন্ডু আমি ও আমার বৌদির মধ্যে কখন যে অনবধানে এক সখ্য গড়ে উঠেছিল, একে অন্যের প্রতি সহানুভূতি, সমবেদনা সব মিলেমিশে কবে কখন কোন্ মুহূর্তে যে বৌদিকে আমি এবং বৌদি আমাকে ভালবেসে ফেলেছিলাম ও ভালবেসেছিল তা আমরা কেউ বুঝতে পারিনি।