ভাগবত-পরিচয়
পুরাণকার ব্যাসদেব শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ রচনার ইতিহাস বিচিত্র। এর রচয়িতা মহামুনি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস বা সংক্ষেপে ব্যাসদেব। ব্যাসদেব ব্যক্তি-বিশেষ ছিলেন অথবা ব্যাসদেবউপাধিবিশিষ্ট বহু মুনি বর্তমান ছিলেন, সে বিচার করবেন, ঐতিহাসিকগণ। আমরা প্রাচীন ভারতের যে অসংখ্য গ্রন্থের রচনাকৰ্ত্তা ব্যাসদেবের পরিচয় জানি, তার কাহিনী দিয়েই আলােচনা আরম্ভ করবাে।
ব্যাসদেবের জন্ম, মহামুনি বশিষ্ঠের পুত্র শক্তি। শক্তি যখন কল্মষপাদের হাতে মৃত্যুবরণ করলেন, তখন তাঁর একমাত্র পুত্র পরাশর মাতৃগর্ভে মাতা অদৃশ্যন্তী এবং পিতামহ বশিষ্ঠদেবের রক্ষণাবেক্ষণে পরাশর ক্রমে মহাপণ্ডিত হয়ে উঠলেন।
একদিন পরাশর মুনি নদীপার হবেন-খেয়া নৌকা চালাচ্ছে মৎস্যগন্ধা নামে এক ধীবর-পালিতা কন্যা। পরাশরের কল্যাণে ঐ কন্যার গায়ের মৎস্যগন্ধ দূর হলাে— তিনি হলেন পদ্মগন্ধা ধীবর দাসরাজের পালিতা ঐ পদ্মগন্ধাই সত্যবতী।
পরবর্তী কালে হস্তিনারাজ শান্তনু এই সত্যবতীকেই বিয়ে করেছিলেন। যাহােক্, সত্যবতীর কুমারীকালেই পরাশরের ঔরসে তার গর্ভে যমুনার মধ্যবর্তী এক দ্বীপে এক পুত্রের জন্ম হয়—পুত্রের নাম রাখা হয় কৃষ্ণ। দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে কৃষ্ণের অপর পরিচয় ‘দ্বৈপায়ন’। আরও পরবর্তী কালে কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদ-বিভাগ করেছিলেন বলে তার নাম হলাে মহামুনি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস।
ব্যাসদেবের কীর্তি ব্যাসদেব জীবনে যে অসংখ্য কীৰ্ত্তি স্থাপন করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম কীৰ্ত্তি বেদ-বিভাগ।
ব্যাসদেবের পূবে সমস্ত বৈদিক মন্ত্র ছিল গদ্য, পদ্য এবং গীতের মিশ্রণে রচিত। ব্যাসদেবই সর্ব প্রথম এগুলিকে সম্পাদনা করে বিভিন্ন বেদে বিভক্ত করেন।