ভূমিকা “
“মানুষের কাছে পেয়েছি যে বাণী তাই দিয়ে রচি গান, মানুষের লাগি ঢেলে দিয়ে যাব মানুষের দেয়া প্রাণ।”
এমন নিঃসঙ্কোচ উচ্চারণ তাঁরাই করতে পারেন, যাঁরা নির্লোভ জীবন দিয়ে দেশ ও জনগণকে ভালবেসেছেন। তেমনি এক মহান পুরুষ ছিলেন কমরেড সত্যেন সেন। রাজনীতি ছিল তাঁর দিনবদলের, আর সহযোদ্ধা তাঁর মেহনতি মানুষ, যাঁদের জন্যে তিনি তাবৎ সময়কালকেই নিবেদন করেছিলেন আমৃত্যু।
সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও শিল্পী সংগ্রামী সত্যেন সেন, নির্মোহ জীবনের তাবৎ শক্তি দিয়ে গড়েছেন সংগঠন, লিখেছেন গান, আর তারই উজ্জীবনী শক্তি দিয়ে রচনা করেছেন জীবনের জয়গান। প্রত্যয়দৃপ্ত শপথে বলীয়ান লাখো মানুষের সেই মিছিলে সামিল সত্যেন সেন তাঁর লেখায় মানুষের উপরই আস্থা স্থাপন করে গণশক্তি সংগঠনে ব্রতী হয়েছিলেন বলেই তাঁর অগণিত রচনার মধ্যে বিদৃত হয়েছে রাজনৈতিক বিশ্বাস, অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছবার দৃঢ় সংকল্প এবং মানুষের আনন্দ-বেদনার উপাখ্যান রচনায় রত্নসম্ভার। তাইতো ‘জেল থেকে লেখা’ গ্রন্থে তাঁর চিন্তা-ভাবনা, পারিপার্শ্বিকতা এবং মানুষের চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌছবার তাগিদ মেলে। তাঁর সকল রচনা সম্ভারে বিকশিত যে স্বপ্ন, তারই পুনরাবৃত্তি এই গ্রন্থে এবং জেলজীবনের বয়ানে ব্রিটিশ রাজত্বে সাম্রাজ্যবাদী আর পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক আরাধ্যকে তুচ্ছজ্ঞান করে সাধারণ মানুষের যে লড়াই-সংগ্রাম, তারই অগ্নিপুরুষ কমরেড সত্যেন সেন নিবেদন করেছিলেন নিজেকে বহুজনের সামগ্রিক শক্তি দিয়ে। শ্রেণী বৈষম্যের বিরুদ্ধে মেহনতি মানুষের নয়া দুনিয়া প্রতিষ্ঠার সংকল্পে যাঁরা আত্মবিশ্বাসী এবং দৃঢ়প্রত্যয়ী, তাঁদের সংগঠিত করে রাজনৈতিক যুদ্ধকে সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সজ্জিত করেছিলেন ‘উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী’ প্রতিষ্ঠা করে। উদীচী তাঁর সন্তান। তাই আজও তাঁর রচিত মানুষের গান গেয়ে চলেছে তারা।
শিল্পী সব্যসাচী হাজরা প্রচ্ছদ এঁকেছেন, তাঁর ঋদ্ধ হাতে গ্রন্থটি আকর্ষণীয় হয়েছে। তাছাড়া কম্পোজ থেকে প্রকাশনা পর্যন্ত সকল স্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মী সকলকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ তাঁদের শ্রম ও মেধা না হলে এ গ্রন্থ প্রকাশ করা সম্ভব হতো না। ‘জেল থেকে লেখা’ গ্রন্থের প্রকাশও পাঠক মহলে সমাদৃত হলে সত্যেন সেনকে যথার্থ শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। গ্রন্থটি প্রচার বহুল হোক, এই কামনা রইলো ।