এই গন্ধ আর শব্দলােকের মাঝখান থেকে কিছুতেই উঠে যেতে পারে না সে, আগুনের আঁচে সিদ্ধ হয়ে গেলেও না। এক দিকের পায়াভাঙা একটা খুরসি পিঁড়িতে বসে দুলে দুলে গুন গুন করে অবিরত কেঁদেই চলে। সে কান্নারও অবশ্য একটা ভাষা আছে ,সে ভাষা ভিক্ষার। যতাে রকম ভােজ্যবস্তুর নাম তার জ্ঞান-জগতে ধরা পড়েছে।
একে একে সেইগুলি উচ্চারণ করে করে সে শুধু বলতে থাকে “দাও”। “ভাত দাও” “মাছ দাও”, “আলু দাও”, “চিনি দাও”—প্রার্থনার আর শেষ নেই। যেন অতােটুকু বয়সেই জেনে ফেলেছে সে—সত্যকার প্রাপ্য পাওনা তার কিছুই নেই, আবেদনের জোরে যেটুকু আদায় করা যায়।
তবে সে আবেদনে কর্ণপাত করবার মতাে সহৃদয়তা কারুরই বড় দেখা যায় না। চড়াই পাখির ছানার মতাে ছােট্ট এই মেয়েটা যেন বাড়ি সকলের বিরক্তি উৎপাদনের একটা কেন্দ্র।
কাক বা বেড়ালের মতাে ‘দূর দূর’ ‘ছাই ছাই’ ভাব রয়েছে সকলের মনে, নেহাৎ মানুষজাতীয় জীবনটাকে তাড়া দিয়ে পাড়াছাড়া করা অথবা উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয় বলেই বােধ করি ভাঙা ওই পিঁড়িখানা অধিকার করে বসে থাকতে দেওয়া যায় তাকে। দেখা যায় দিনের পর দিন তার সেই একঘেয়ে আবেদনের ভঙ্গি।