“মার্কসীয় দর্শন : মানুষ ও সমাজ-২” বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা:
মার্কসীয় দর্শন বা মার্কসবাদের সঙ্গে যাঁর নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, তিনি হলেন মহামনীষী কার্ল হেনরিক মার্কস, বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে যিনি আধুনিক বিশ্বে সমধিক পরিচিত। এই মার্কসীয় দর্শনের সঙ্গে ফ্রেডরিক এঙ্গেলস এবং ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন-এর নামও বিশেষভাবে জড়িত। তাই একটি দার্শনিক প্রস্থান হিসেবে মার্কসবাদ একদিকে মার্কস এবং অন্যদিকে এঙ্গেলস ও লেনিন-এর রচনাবলির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা একটি ক্রমবিকাশমান দর্শন বিশেষ। দার্শনিক ও রাজনৈতিক প্রস্থান হিসেবে মার্কসবাদ শ্রমিকদের বিপ্লবী সংগ্রামের মাধ্যমে সমাজের পুঁজিবাদী আধিপত্যের অবসান এবং মূলোৎপাটনে দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বাস্তব সমাজের প্রকৃতি অনুসারে তত্ত্ব হিসেবে মানবসমাজ কী এবং মানবসমাজ কেমন হওয়া উচিত, এরই একটি সুস্পষ্ট ধারণা এবং প্রতিরূপ প্রদানে মার্কসীয় দর্শন সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে। মার্কস, এঙ্গেলস ও লেনিন বলিষ্ঠ যুক্তিপ্রক্রিয়া এবং বৈজ্ঞানিক প্রণালিতে পুঁজিবাদী সমাজে প্রচলিত উৎপাদনের সঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে মূল উৎসের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। আর এখানেই মার্কসীয় দর্শনের মূল কৃতিত্বটা নিহিত। মহামতি কার্ল মার্কস, ফ্রেডরিক এঙ্গেলস এবং লেনিন, এঁরা সবাই অত্যন্ত জোরালোভাবে, অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁদের দার্শনিক সিদ্ধান্তে বস্তুবাদের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। শুধু তা-ই নয়, এঁরা সবাই দাবি করেছেন যে, এই বস্তুবাদ থেকে সামান্য বিচ্যুতিও মারাত্মক বিভ্রান্তির বেড়াজালে মানুষকে আটকিয়ে দিতে পারে। এ ব্যাপারে তাই এঁরা আমাদের সতর্কতা অবলম্বনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন বারবার। অবশ্য এঁরা আঠারো শতকের বস্তুবাদের মধ্যেই নিজেদেরকে বদ্ধ করে রাখেননি। যুগ প্রয়োজনে তাঁরা তাঁদের বিপ্লবী দর্শনকে আঠারো শতকের বস্তুবাদী দর্শন থেকে আরও উঁচুস্তরে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। জার্মান চিরায়ত দর্শনের আলোকে এঁরা এঁদের অবস্থানকে সমৃদ্ধ করে মার্কসীয় দর্শনকে যুক্তি ও বিজ্ঞাননিষ্ঠ ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করেন। বর্তমান প্রকল্পিত, সংকলিত ও সম্পাদিত মার্কসীয় দর্শন : মানুষ ও সমাজ শিরোনামে উপস্থাপিত গ্রন্থের প্রতিটি খণ্ডের প্রতিটি প্রবন্ধেই এই সত্য অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।