“কর্বট কন্যা” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে আর্যব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রবাহ। গঙ্গার পশ্চিম তীর পর্যন্ত বেগমান ছিল, কিন্তু পূর্ব ও উত্তর তীরে সে-প্রবাহ ক্রমশ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে গেছে। বহুদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতি আর্যমানসের একটা উন্নাসিকতা, ঘৃণা ও অবজ্ঞার ভাব সক্রিয় ছিল। বাংলার আদিম কৌমবদ্ধ মানব-সমাজ বহুদিন পর্যন্ত আর্যধর্ম-সংস্কৃতির সক্রিয় বিরােধিতা করেছে; বােঝাপড়া করে একটা সমন্বয় গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছে। এই বােঝাপড়ার ফলশ্রুতিতে বৈদিকযুগ, বৌদ্ধযুগ অতিক্রম করে হিন্দুযুগে আর্য-ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও সংস্কৃতির চূড়ান্তরূপ হিসেবে প্রচলিত হিন্দুধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে আর্যব্রাহ্মণ্য বর্ণাশ্রম, জন্মান্তরবাদ ও ধর্মসংস্কৃতির বিজয়াভিযান বিনা প্রতিরােধ ও বিনা সংঘর্ষে সম্পন্ন হয় নাই। সেই সংঘাত, সহযােগিতা ও সমন্বয়ের অব্যাহত সংগ্রামে আমাদের পূর্ব-পুরুষের বিশ্বাস ও ঐতিহ্যকে লালন করার ঐকান্তিক নিষ্ঠায় নিম্নকোটি মানুষের যে অদম্য প্রাণশক্তির পরিচয় পাওয়া যায় তাকে অবলম্বন করে রচিত হয়েছে কট কন্যা। এ উপন্যাসের কাহিনী গড়ে উঠেছে তকালীন ঐতিহাসিক পটভূমিতে। উপন্যাসের ঘটনাবলি ও আখ্যান কুমার গুপ্তের রাজত্বকালের শেষাংশ, আনুমানিক ৪৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আট-দশ বৎসরকাল ব্যাপ্ত। ঘটনার স্থান গুপ্ত সাম্রাজ্যের বহিঃপ্রান্তীয় দেশ সম্ভার রাজ্য এবং তার অন্তর্গত মধুপুর, ভাওয়াল, শিবপুর, পলাশতলী, পঞ্চবটি ও বন্দরনগরী ঢাকা অঞ্চলসমূহ। উপন্যাসের ঘটনাপ্রবাহ ও চরিত্রসমূহ কল্পনায় নির্মিত, তবে অবশ্যই অনৈতিহাসিক নয়।