“শামুক” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
ভাবলেও বিস্ময় জাগে যে, এ উপন্যাসটি হাসান আজিজুল হক লিখেছেন তাঁর ১৮ বছর বয়সে। এবং একটি অমোঘ বাক্য দিয়ে শুরু তার: ‘তেলাপোকা পাখি নয়।’ কথাটি বলেছেন বিশ শতকের তিনের দশকের বাঙালি নিম্ন-মধ্যবিত্তর চেহারা-চরিত্র, বিশেষত একটি কেরানি-চরিত্রর জীবনবাস্তবতা নির্মাণ করতে গিয়ে। কিন্তু ভাবুন বয়সটা। অবশ্য সুকান্ত ‘আঠারো বছর বয়স’ কবিতাটাও মনে পড়ছে, যে সময়ে ‘বিরাট দুঃসাহসেরা’ উঁকি দেয়। একটা পুরো জীবনের পোড়া-বাস্তবতা যে ভাষা ও ভঙ্গিতে তিনি লিখেছেন, একই সঙ্গে পক্কতা ও পাকামোর যে অপূর্ব সমন্বয়, এমনকি ‘শামুক’ নামকরণ- এ থেকেই তাঁর প্রস্ততি ও প্রতিভার আভাসটা বোধকরি অনেকেই টের পেয়েছিলেন। নইলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতি পুরস্কার প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত একশো উপন্যাসের চূড়ান্ত বাছাইয়ে সেরা সাতটির মধ্যে এই বইটি জায়গা পেত না। ‘শামুক’ রচিত হবার ইতিহাস লেখক স্বয়ং লিখেছেন ভূমিকায়। উপন্যাসটি পড়ার আগে অবশ্যপাঠ্য এ লেখাটি পড়ে নিলেই পাঠক জানবেন বিস্তারিত। তাই আমাদের বলার কথা নেই তেমন। শুধু এটুকু বলার যে, এক-একজন লেখকের গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় তাঁর সৃজন আর লিখনভঙ্গিও শুরু থেকেই কেমন একটা নিজস্ব চেহারা নিতে থাকে, সেটুকু বোঝার জন্য প্রাথমিক লেখার বিশেষ গুরুত্ব থাকে। অন্য লেখকদের ভাষা ও ভঙ্গির প্রভাব সত্ত্বেও, অনেক দুর্বলতা সত্ত্বেও এখানটাতেই ‘শামুক’-এর মূল্য। এত বড় একজন কথাসাহিত্যিক কীভাবে পথহাঁটা শুরু করলেন তার অনেক চিহ্ন ধরা আছে এই বইয়ে।
সৈকত হাবিব
কবি