জীবনানন্দ দাশ বাংলা কবিতায় একটি স্বতন্ত্র ধারার সৃষ্টি করেছেন। তাঁর কবিতার মধ্যে বিষাদময়তার অন্ধকার ছায়া ছড়িয়ে রয়েছে। প্রেমের মাঝে যেমন বিষাদ ছড়িয়ে রয়েছে, তেমনি বিষাদকেও প্রেমের স্পর্শে মহিমান্বিত করেছেন আজন্ম অবহেলিত এই প্রেমের জাদুকর। তিনি সার্বক্ষণিক কবি।
‘বনলতা’ বা ‘আকাশলীনা’ কবিতাকে অনেকেই বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক কবিতার মধ্যে একটি মনে করতে পারেন। কিন্তু এই দুটি কবিতায় কী পেয়েছেন কবি? কবিতা দুটিতে তিনি প্রেমের জন্য হাহাকার করেছেন সর্বদা। শুধু এ দুটি নয়, অনেক কবিতায়ই। তিনি তো অভাব, আপন মুদ্রাদোষ (কবির ভাষায়) আর প্রাত্যহিক সাংসারিক যন্ত্রণায় দগ্ধ একজন বিদগ্ধ মানুষ। তাঁর বিষণ্নতায় কোনো গোপন ও একান্ত হাহাকার লুকিয়ে ছিল কিনা বা থাকলে সে কি রকম তা ছিল আমাদের কৌতূহলের বিষয়। তাঁর সৃষ্ট নারী চরিত্রগুলো ম্রিয়মাণ নয়, বরং তুলনামূলকভাবে উজ্জ্বল ও স্বীয় আলোয় উদ্ভাসিত। তারা আপন গুণে গুণান্বিত এবং কর্মে মহিমান্বিত। তাই মনে হতে পারে জীবনানন্দ কেনই বা প্রেমের তরী ভাসান অথৈ সাগরে, আবার কেনই বা মাঝ দরিয়ায় তাকে হাবুডুবু খেতে হয়! তবে কি তিনি বিষণ্নতাকেই ভালবাসেন, নাকি বিষণ্নতার করালগ্রাস তাকে নিঃসঙ্গতার অথৈ সাগরে নিমজ্জিত করে রাখে, যা থেকে তিনি চাইলেও মুক্ত হতে পারেন না।