আজকাল দুনিয়াব্যাপী সর্বত্র মানবতা, মানবিকতা, মানববাদ প্রভৃতি পরিভাষা বহুল ব্যবহৃত। বলতে গেলে আজকের নীতিশাস্ত্রী, সমাজবিজ্ঞানী, রাজনীতিক, সাহিত্যিক, দার্শনিক এবং মানবহিত-কামীরা উক্ত সব গভীর তাৎপর্যময় শব্দযোগেই রাষ্ট্র, সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা, অর্থ, বিশ্বশান্তি, সহাবস্থান, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রভৃতি বিষয়ে নীতিনিয়ম নির্ধারণ করে থাকেন।
অতএব, নির্বিশেষে মানবকল্যাণ প্রেরণার উৎস হচ্ছে ওই মানবতা, মানবিকতা বা মানববাদ-নিষ্ঠা। অবশ্য প্রাণী হিশেবে মানুষের উদ্ভবকাল থেকেই মানুষই হচ্ছে ব্যক্তি-মানুষের ভাব-চিন্তা-কর্ম-আচরণের, সমস্যা-সম্পদ-চেতনার, কাম-প্রেম-প্রীতি-স্নেহ-মমতার, দান-প্রতিদানের, ঈর্ষা-অসূয়ার, ঘৃণা-দ্বেষ-দ্বন্দ্বের, সংঘর্ষ-সংঘাতের অবলম্বন। উক্ত সব মানসিক ও কায়িক অভিব্যক্তির মূলে রয়েছে শারীর প্রাণী হিশেবে ব্যক্তি মানুষের আত্মরক্ষার, আত্ম প্রতিষ্ঠার ও আত্মবিকাশের গরজ। এ চেতনার ও লক্ষ্যের শেকড় হচ্ছে প্রাণী হিসেবে মানুষের প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি।
আত্মপ্রসারকামী সাহসী লিন্সু শক্তিমানই ভীরু-দুর্বল স্বল্পবৃদ্ধি মানুষের জান-মালের গতরের মালিক হয়ে চালু করল দাসপ্রথা, বশ করল দুর্বলকে। গোষ্ঠীর সংরক্ষক সর্দারও ক্রমে হয়ে উঠল স্বৈরশাসক। পুরোহিতের ও শাহ-সামন্ততন্ত্রের রাজার, রাজ্যের উদ্ভব এভাবেই। তারপর গণচেতনার, গণদাবির ও গণদ্রোহের মুখে ক্রমে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ইত্যাদির উদ্ভব ঘটে। প্রাসঙ্গিক অপ্রাসঙ্গিক এবং সংলগ্ন অসংলগ্নভাবে এই বিষয়টি চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে এখানে; গ্রন্থভুক্ত একুশটি প্রবন্ধ আমাদের মন-মনন, সমাজ-সংস্কৃতি এবং আমাদের আত্ম-জিজ্ঞাসার দর্পণ।