”কবির বিষন্ন বান্ধবীরা” বইয়ের প্রথম ফ্ল্যাপ এর লেখা:
শালিকের ডানায় তুমি / বেঁধেছ শাড়ির আঁচল আমি শুধু বরুণের ডালে / দুপুরের চঞ্চল রােদ পড় তােমার প্রেমিকার নামে দিয়ে যাত্রা শুরু। তারপর দহনের রাত, মধ্যবিত্ত কবিতাগুচ্ছ কিংবা আলােচ্য কবির বিষন্ন বান্ধবীরা-আঙ্গিক সম্পূর্ণ ভিন্ন হলেও নব্বই দশকের কবি মুস্তাফিজ শফির কবিতার গতিমুখ কিন্তু একই। কিছুটা ঘাের, কিছুটা আড়াল তাঁর কবিতায় স্পষ্ট। পাঠক পড়তে পড়তে জড়িয়ে যান অন্য এক মায়ায়, ভিন্ন এক নস্টালজিক অনুভূতিতে। মনের আকাশে ঘনিয়ে আসে বেদনার ভার, ছড়িয়ে পড়ে এক হৃদয় থেকে অন্য হৃদয়ে। কোলাহলমুখর নাগরিক বাস্তবতায় বসবাস করেও তিনি নির্জনতার কথা বলেন, হাহাকার আর বিষন্নতার কথা বলেন। উচ্চস্বর নয়, অনেকটা নিজের মতােই নিচুস্বরে, প্রায় চুপচাপ নিভৃত, বিনীত ভঙ্গিমায় কবিতার সুর আর নিজস্ব ভাষা তৈরি করেন তিনি। শুধু দৃশ্য নয়, চিত্রকল্প নয়, প্রতীক নয়-তার। কবিতায় আখ্যান তৈরির প্রবণতাও স্পষ্টভাবে লক্ষণীয়। এখানেই তিনি স্বকীয়। মহৎ বেদনাবােধ না-থাকলে, মনের ভেতর হাহাকার না-থাকলে সৃষ্টি হয় না মহৎ কবিতা, কিংবা সুর। মন যদি কেমন না করে, তবে কীসের প্রেম? মুস্তাফিজ শফি তাঁর নিঃসঙ্গ বেহালার তারে সেই মন-কেমন-করা হাহাকারটাই বাজিয়ে চলেন। আর সেই সুর শুনে দূরদিগন্তের ওপারে জলছবি হয়ে থাকা বান্ধবীরাও। বিষন্নতায় হাহাকার করে ওঠে; পাখির পালক, ঝরাপাতা, নীল ঘাসফুল, মৌন তৃণের ভিড়ে মুক্তাদানার মতাে জেগে থাকে। তারা। এই সিরিজ কবিতায় নতুন এক নিরীক্ষার আশ্রয় নিয়েছেন কবি। সেটা খুঁজে বের করার ভার আপাতত পাঠকের ওপরই থাকল।