“জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি ১৯০৫-৪৭” বইয়ের পিছনের কভারের লেখা:
উনিশ শ’ পাচ সালের প্রথম বঙ্গভঙ্গ থেকে শুরু করে উনিশ শ’ সাতচল্লিশ সালের দ্বিতীয় বঙ্গভঙ্গ পর্যন্ত সময়টুকু নিয়ে রচিত জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি গ্রন্থটি প্রচলিত অর্থে ঘটনার বর্ণনা নয়, বরং ঘটনার তাৎপর্য। অনুসন্ধানের বিশিষ্টতায় অনন্য। বাঙালীর জাতীয়তাবাদের বিকাশটি ঘটেছিল এই সময়টুকুর মধ্যে, বিশেষ করে প্রথমবারের বঙ্গভঙ্গের প্রতিরােধ যে তীব্র দেশাত্মবােধের আর আত্মােপলব্ধির সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল, তারই হাত ধরে। অন্যদিকে ওই বঙ্গভঙ্গের মধ্য দিয়েই বাংলায় আধুনিক সাম্প্রদায়িকতা বিস্তারের ইতিহাসটিরও শুরু। এই হাত ধরাধরি করে চলা জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আধিপত্যের মাঝেই মানুষের মুক্তির প্রশ্নটি কিভাবে আটকা পড়লাে পরিচয়ের রাজনীতির আড়ালে, কিভাবে তাদের শ্রমিক বা কষক পরিচয়কে ভুলিয়ে ভারতীয় বা পাকিস্তানী, হিন্দু বা মুসলিম পরিচয়কেই সামনে টেনে এনে প্রধান পরিচয় বানিয়ে দেয়া হয়েছিল, সেটাও বর্তমান গ্রন্থের অন্যতম উপজীব্য।
জাতীয়তা ও সাম্প্রদায়িকতা উভয়ের উত্থানের ওই সময়টুকুতে সমাজের সক্রিয় অংশগুলাের মনস্তত্ত্ব ও আকাঙ্ক্ষাকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন একদিকে তাদের ক্রিয়াকাণ্ড, অন্যদিকে সমকালীন সাহিত্যের সাক্ষ্যসহ নানান উপাদান ব্যবহার করে।
এক একটা যুগ এবং তাতে ভূমিকা রাখা সামাজিক গােষ্ঠীগুলাের মনােভাবকে। উপলব্ধির জন্য সাহিত্যিক নিদর্শনগুলাের এত গভীর ও বিপুল ব্যবহার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর আগে খুব কমই হয়েছে বাংলা ভাষায়। ১৯০৫-৪৭ কালপর্বের ঘটনাবলীর বীজ অনুসন্ধানের প্রয়ােজনে সিরাজুল ইসলাম। – চৌধুরী যেমন অনায়াসে বিচরণ করেছেন এর আগেকার উনিশ শতকের কীর্তিমানদের তৎপরতায়, তেমনি এই জাতীয়তাবাদী রাজনীতির ফলাফলকেই কখনাে কখনাে চিহ্নিত করেছেন আমাদের চারপাশের বাস্তবতায়।
জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি রচিত হয়েছে প্রায় দশ বছর ধরে; বাংলাদেশের ইতিহাস বিষয়ে অনুসন্ধিৎসু পাঠকেরা, রাজনীতির বাঁকগুলাে নিয়ে উৎসুক ব্যক্তিরা, এবং অতি অবশ্যই বাংলা সাহিত্যের সমঝদার বহুকাল ধরে এই আকর গ্রন্থটির কাছে আসতে বাধ্য হবেন।