এক প্রতœ-মুহূর্তে যখন জীবনের বিচিত্র উপকরণের অসংখ্য নির্বিশেষ রূপবন্ধের মধ্যে একটি বিশেষ ভাষ্য অনিবার্য অন্বিষ্ট হয়ে উঠেছিল, হয়তো সেই সমতীতকালে সাহিত্যের জন্ম। তারপর সাহিত্য ব্যাপ্ত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল ভাষায়, কালে, ভূগোলে। কিন্তু আমাদের নতুন কালের ভাব-বিভঙ্গে প্রথম ভাসিয়েছিল বণিক ইংরেজরা। মধ্যযুগকে সন্ন্যস্ত করে আমাদের বাংলা সাহিত্যও যখন অধুনায়তন আলোকধারায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে তখন ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষের দ্বিধা-বিভক্ত স্বাধীনতা কেবল বঙ্গদেশকে নয় বাংলা সাহিত্যকেও ভাগ করে দিয়েছিল। তবে বিভক্ত পূর্ব-বাংলাতেই প্রত্যুপ্ত হয়েছিল বাংলাদেশের সাহিত্যের বীজ, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে যে দেশ অর্জন করার যুদ্ধে আমরা এক নদী রক্ত দিয়েছিলাম। এই যুদ্ধ ও রক্তমূল্য বাংলাদেশের সাহিত্যকে নির্বিশেষ ব্যঞ্জনায় সর্বমানবিক তাৎপর্যে মর্যাদাবান করে। ফলে, অলক্ষ্যে অসংখ্য কবি-লেখক-নাট্যকারের হাতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সাহিত্যের একটা গৌরবদীপ্ত ভাণ্ডার ক্রমে রচিত হতে থাকে। বাংলাদেশের সাহিত্যের সম্পূর্ণ ইতিবৃত্ত গ্রন্থে শহীদ ইকবাল বাংলাদেশের সাহিত্যের এই সমগ্র সঞ্চয়কে বিলোকনের আয়নায় দেখতে চান। ইতোমধ্যে প্রবন্ধপ্রবণ বই তিনি অনেক লিখেছেন; আত্মদর্শনমূলক রচনা বিশ শতকের রূপকথার নায়কেরার অভিদ্যোতনার মাধ্যমে প্রবেশ করেছেন সৃজনশীল সাহিত্যের নন্দনলোকে; শহীদ ইকবালের সাহিত্য-প্রজ্ঞা সম্পর্কে যাঁরা জানেন, নিঃসংশয়ে জানবেন কী হার্দ্য-যত্নে তিনি রচনা করেন তাঁর প্রতিটি শব্দ। এভাবে নিজের দায়বোধকে ক্রমবিস্তৃত করে মননঋদ্ধ ভাষায় শহীদ ইকবাল এই বইয়ের প্রতিটি শব্দ দিয়ে মলাটবন্দি করতে চান কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, অনুবাদ, শিশুসাহিত্য, স্মৃতিকথা, আত্মজীবনী ও ভ্রমণসাহিত্যে রচিত বাংলাদেশের সাহিত্যের বিপুলায়তন ইতিহাসকে। এ গ্রন্থ প্রকাশের অবচেতনে বিপুল বিস্তারের প্রত্যাশা তাই বেশি হবে না। সৈকত আরেফিন গল্পকার