“মিশেল ফুকো তারঁ তত্ত্ববিশ্ব” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
বিশ শতককে বলা যেতে পারে তত্ত্বচিন্তার শতক। উনিশ শতকে বা তারও আগে মানুষের চিন্তাচেতনায় বিভিন্ন প্রবণতার সূচনা হয়েছিল। তবে দুটি বিশ্বযুদ্ধ ও স্নায়ুযুদ্ধের অভিঘাত শুষে নিতে-নিতে ভাবনা-প্রস্থানগুলি প্রসারিত হলাে বিচিত্র শাখা-প্রশাখায়। একুশ শতকের শূন্যদশক পেরিয়েও অব্যাহত রয়েছে জিজ্ঞাসার পালাবদল। তবু বিশ শতকই তত্ত্ববিশ্বের প্রকৃত চারণভূমি। অখণ্ড অবিভাজ্য মানববিশ্বের অধিবাসী হিসেবে যত চিনতে পারছি নিজেদের, আমাদের কৌতূহল মহাদেশের গণ্ডি অতিক্রম করে যাচ্ছে দ্রুত। নতুন নতুন তত্ত্বের আলােয় উদ্ভাসিত হয়ে তৃতীয় বিশ্বের অধিবাসীদের চিন্তা-চেতনার সীমান্তরেখাও মুছে গেছে কবেই। সাহিত্য ও সংস্কৃতিতত্ত্বের মাটি ও আকাশ আমূল পালটে গেছে। মনােভুবন ও বিশ্বচরাচরের দ্বিরালাপে আমরা শরিক এখন।বাঙালি পড়ুয়ার কাছে রূপান্তরপ্রবণ এই তত্ত্ববিশ্ব ও তার সূত্রধার চিন্তাগুরুদের পরিচিত করার দুরূহ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বিরল প্রজ্ঞা ও সংবেদনাসম্পন্ন এক ধীমান প্রাবন্ধিক। তার এই বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে আলােচিত হয়েছে তত্ত্বগুরু মিশেল ফুকোর সংশ্লেষণী প্রতিবেদনের বীক্ষাভূমি এবং আশ্চর্য স্বকীয়তায় ঋদ্ধ বিশ্লেষণপদ্ধতি ও নতুন তাৎপর্যের আলােয় উদ্ভাসিত চেতনাভুবন। প্রতীচ্যের এই পথপ্রদর্শক চিন্তাগুরুর তত্ত্ববিশ্বের সঙ্গে জিজ্ঞাসু বাঙালির সেতু রচনার ক্ষেত্রে এমন সমৃদ্ধ গ্রন্থ বাংলা ভাষায় এখনও অদ্বিতীয়।