হাইকু এক ধরনের সংক্ষিপ্ত জাপানি কবিতা। তিনটি পংক্তিতে সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি মুহূর্তে ঘটিত মনের ভাব প্রকাশ করা হয়। জাপানি হাইকু একটি লাইনে লিখিত হয়। সেই বাক্যটিতে ১৭টি মোরাস থাকে। সাধারণত একটি ছবি বর্ণনা করার জন্য হাইকু লিখিত হয়। মোরাস ও মাত্রা একই ব্যাপার নয়। ইউরোপিয়গণ ১৭ মোরাসকে ১৭ দল মনে করে হাইকু লেখার সূত্রপাত করে। তাদের দেখাদেখি বাংলা ভাষায় ১৭ মাত্রার হাইকু লেখার প্রচলন হয়। মোরাস, দল ও মাত্রা এক-একটি ভাষার নিজস্ব শ্বাস অনুসারী। সেই অনুজায়ী ১২ মোরাসে ১৭ সিলেবল হয়। ইউরোপে ইমেজিস্ট আন্দোলনের পর ১৭ সিলেবলের পরিবর্তে আরো বেশি সিলেবলের হাইকু লেখা শুরু হয়েছে। বাংলা ভাষায় অনেক কবিই হাইকু লেখার চেষ্টা চালিয়েছেন। কারো কারো হাইকু সফল হয়েছে আর অধিকাংশই হাইকুর ধারা ধরে রাখতে পারেনি। বাংলা ভাষার একজন গুরুত্বপূর্ণ কবি মুহম্মদ নূরল হুদা। তিনি জাপানের টোকিও শহরে অবস্থানকালে এক জাপানি নারীর রূপে মুগ্ধ হয়ে লেখেন হাইকু। বইটির শুরুতে ঘোরের কথা শিরোনামের মধ্যে কবি লিখেনÑ ‘খুব সহজ সরল অনায়াস ও স্বতঃস্ফূর্ত অনুভব। প্রস্তাবনা (প্রথম পঙক্তি), পাল্টা প্রশ্ন (দ্বিতীয় পঙক্তি) ও বিস্ময়াশ্রিত মীমাংসা (তৃতীয় পঙক্তি) দিয়ে তার আপাত সমাপ্তি। ২৮ নভেম্বর থেকে ১লা ডিসেম্বর এই চার দিনে একটানা লেখা হলো এই ধরনের ৪৫টি ত্রিপঙক্তির কবিতা।’ এই হাইকুগুলোকে পরবর্তীকালে মলাটবদ্ধ করেন ‘উড়ন্ত ডানার দৈর্ঘ্যে’ শিরোনামের এই বইটি। বইটিতে ৪৯ টি হাইকু রয়েছে। (১১) যতক্ষণ বাজবে না, খুলবে না দ্বার। কে বাজাবে, কে বাজাবে তোমার দুয়ার? আমি তো প্রবেশ বুঝি, নিষেধ বুঝি না। (২০) আয়াকো জাপানি মেলে, সে-ও বাঁধে খোপা। কি শিখা জে¦লেছো তুমি লালের ফিতায়? যে হাতে বাঁধতে জানো, সেই হাতে বাঁধো। (২১) দীঘল পায়ের শ্যেন, তুমি চীনা মেয়ে। পায়ে হেঁটে পৃথিবীটা করবে ভ্রমণ? বাংলার বাউল কবি, সঙ্গী একতারা। হাইকুর আদলে লিখিত হলেও বাংলাভাষী এ কবির মনের ভাব এ দেশের প্রকৃতির সাথে মিলিত। ফলে উপমা, চিত্রকল্পের অনেক অংশে বাংলা রূপ-রসের সন্ধান মেলে।