“খোয়াজ খিজিরের সিন্দুক (প্রথম আলো বর্ষসেরা বই ১৪২২) ” বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ
ফয়জুল ইসলাম লিখছেন গত শতাব্দীর আশির দশক থেকে তার গল্পের কেন্দ্র থেকে প্রান্ত অবধি ছড়িয়ে আছেন সেইসব মানুষ, জীবন যাদের কাছে উদযাপনের অথচ জীবনের কাছে যারা ম্রিয়মাণ। এই প্যারাডক্স তাঁর গল্পকে এক ভিন্ন মাত্রা দেয়, যা আমরা দেখেছি ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘নক্ষত্রের ঘােড়ায়। দীর্ঘ বিরতির পর এ বছর প্রকাশ পাচ্ছে তাঁর দ্বিতীয় গল্পসংকলন ‘খােয়াজ খিজিরের সিন্দুক’ প্রথম গল্পসংকলনে প্রকাশিত জীবনবােধ এ সংকলনে নতুন এক মাত্রা পেয়েছে, স্বপ্নময়তা থাকার পরও শােক,বিষন্নতা ও মৃত্যুময়তার দোলাচলে। অতীতের প্যারাডক্সে তিনি সংযােজন ঘটিয়েছেন মানুষের অন্তর্নিহিত নির্লিপ্ততা ও নিরুপায়তার। এই অভিনব বাঁক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে ফয়জুল ইসলাম প্রকাশ করেছেন নিজের সৃজনশীলতার শক্তি, দেখিয়েছেন বাস্তবতাকে নতুন আদলে নির্মাণের শক্তি। চারটি গল্পের এ সংকলন ধরে রেখেছে আমাদের সমকালের জীবনযাপন, প্রাত্যহিকতার ভঁজে লুকিয়ে থাকা আবহমান জীবনযাপনের বােধ ও বাস্তবতার সঙ্গে মানুষের নিজস্ব পরিভ্রমণের দ্বন্দ্বময়তাকে। এখানে। জীবনধারণের আঁকুতি আছে, জীবনের উৎসবমুখরতাও আছে, কিন্তু সেই আঁকুতি ও মুখরতাকে আচ্ছন্ন করে রাখে জীবনেরই ক্লান্তি। মানুষগুলাে সেই ক্লান্তিকে অতিক্রম করতে চায় কখনাে দুর্দমনীয় আকাক্ষা দিয়ে, কখনাে বা স্মৃতিময়তা দিয়ে। ফয়জুলের প্রকাশের ভাষা মসৃণ হলেও জীবন তাে মসৃণ নয়। তাই অনিবার্যভাবে নাটকীয়তাও অনুভব করি আমরা। মসৃণতা ও নাটকীয়তার সমাপতনে। আমরা বিহ্বল হই, আন্দোলিত হই এবং অনুভব করি, গল্পের ভুবনে ফয়জুল এসেছেন নতুন এক প্রস্তুতি নিয়ে।