এ টিয়ারড্রপ অন দি চিক অভ্ টাইম : দি স্টোরি অভ দ্য তাজমহল
১৬৩১ সাল, ভগ্নহৃদয় মোগল সম্রাট, শাহজাহান, তার প্রিয়তমা স্ত্রীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে উজ্জ্বল দীপ্তিময় আর জাকজমকপূর্ণ একটা স্মৃতিস্তম্ভ (মকবরা) নির্মাণের আদেশ দেন। তাদের প্ৰেম অসাধারণ আবেগের এক অপূর্ব কাহিনী: যদিও তিনি প্রায় সবসময়েই সন্তানসম্ভবা থাকতেন তারপরেও মমতাজমহল প্রতিটা সামরিক অভিযানে তার স্বামীর সঙ্গী হয়েছেন, যার একটাই উদ্দেশ্য তারা যেন কখনও একে অপরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন না হন ।
কিন্তু মমতাজ সহসাই সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন, শোকে অন্ধ শাহজাহান নদী যমুনার তীরে তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটা উদ্ধত কিন্তু অসাধারণ স্থাপত্য কীর্তি সৃষ্টি করেন। ক্রুটিহীন প্রতিসাম্যের দীপ্তিময় একটা মকবরা তাজমহল নির্মাণে সফেদ মর্মর আর গোলাপী বেলেপাথর এবং মূল্যবান রত্নরাজির বৈভবখচিত একটা অলঙ্করণ ব্যবহৃত হয়েছে। বিশ হাজার শ্রমিকের শ্রম আর মোগল কোষাগারের সম্পদ স্থান করে মকবরার নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে প্রায় বিশ বছর সময় লেগেছিল। কিন্তু শাহজাহানকে তার এই আবিষ্টতার জন্য আরো বড় মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছিল। আগ্ৰা দূর্গে নিজের সন্তান কর্তৃক অন্তরীণ অবস্থায়, নদীর অপর তীরে অবস্থিত প্রিয়তমার সমাধিসৌধের দিকে তাকিয়ে, তিনি জীবনের শেষ দিনগুলো অতিবাহিত করেন। তাজমহল ভাইকে ভাইয়ের বিরুদ্ধে, পুত্রকে পিতার বিরুদ্ধে নিষ্ঠুর সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেয় যা সতের শতকের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সাম্রাজ্যকে অপরিবর্তনীয় অধঃপতনের দিকে নিয়ে যায় ।
তাজমহলের অন্তরালের কাহিনীর মাঝে রয়েছে গ্রীক বিষাদের চন্দোলয়, জ্যাকোবীয় প্রতিশোধস্পৃহার সংহার রূপ এবং গ্রান্ড অপেরার আবেগময়তা| তাদের পূর্ববর্তী কাহিনীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কথকের দক্ষতা আবেগময় বিবরণমূলক ইতিহাসের এই কাহিনীতে অ্যালেক্স রাদারফোর্ড (ডায়ানা আর ইকেল প্রেসটন) প্রদর্শনে সমর্থ হয়েছেন যেখানে মর্মরের খ্যাতিমান স্থাপত্যের সেরা নিদর্শনে তারা মানবিক মুখাবয়ব আরোপ করেছেন।
অ্যাম্পেয়ার অব দ্য মোঘল রাইডারস ফ্রম দ্য নর্থ
মধ্য এশিয়ার সমভূমি থেকে ষোড়শ শতকে পরাক্রমশালী মোঘল সাম্রাজ্যের উৎপত্তি। অ্যালেক্স রাদারফোর্ড পাঁচটি শক্তিশালী আর পর্যায়ক্রমিক উপন্যাসে যার শুরু রাইডারস ফ্রম দ্য নর্থ-এ মোঘল সাম্রাজ্যের আর এর সম্রাটদের অবর্ণিত কাহিনীর ধারাবাহিকতায় ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী, সমৃদ্ধশালী আর জৌলুষময় সাম্রাজ্যের উত্থান পতনের কাহিনী বিবৃত করার প্রয়াস পেয়েছেন।
১৪৯৪ সাল সেই বছর ফারগানার সুলতান এক চিত্তাকর্ষক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরন করেন। তার একমাত্র উত্তরাধিকারী, রারো বছর বয়সের বাবর আপাতদৃষ্টিতে সমাধানের অতীত সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেকে আবিষ্কার করে। কিশোর বাবর তার মহান পূর্বপুরুষ তৈমূরের যোগ্য উত্তরসূরীতে নিজেকে পরিণত করার শপথ নেয়, যার সামরিক অভিসানসমূহ দিল্লী থেকে ভূমধ্যসাগর, সমৃদ্ধ পারস্য থেকে ভোলগার তীরবর্তী অরণ্য ভূমির চেহারা আমূল বদলে দিয়েছিল। কিন্তু সাম্রাজ্যের অধিকারী হবার তুলনায় বাবরের বয়স তখন বিপজ্জনকভাবে অল্প।
ফারগানার ন্যায়সঙ্গত সুলতান হিসাবে নিজেকে ঘোষণা করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গোত্রপতি, সর্দারদের আনুগত্য লাভ করবার পূর্বেই তার সালতানাতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র দানা বাঁধতে শুরু করে, এমন কি তার প্রাণ সংশয় দেখা দেয়। আর শীঘ্রই কিংবদন্তীর শহর সমরকন্দের প্রতি তার মোহ বৃদ্ধি পেলে এবং বাবর ধীরে ধীরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠলে সে বুঝতে পারে যে নির্ভীক আর সাহসী নেতাও বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হতে পারে। বিজ্ঞ পরামর্শদাতা আর সাহসী সেনাপতিদের দ্বারা পরিবেষ্টিত অবস্থায় বাবর ভারতে বিশাল এক সাম্রাজ্য স্থাপনে সক্ষম হলেও প্রতি পদক্ষেপে তাকে গোত্রগত দ্বন্দ্ব, আক্রমনকারী সেনাবাহিনী আর নির্মম উচ্চাকাঙ্খী শত্রুর মোকাবেলা করে, বিপদসঙ্কুল পথে অগ্রসর হতে হয়েছে।
এম্পায়ার অভ্ দা মোগল দি রুলার অভ্ দা ওয়ার্ল্ড
১৫৫৬ সন| সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যু এবং আকবরের ক্ষমতায় আরোহণ। শুরু হলো রুলার অভ দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর রাজকীয় উপাখ্যান। মাত্র ১৩ বছর বয়সে মোগল সাম্রাজ্যের অধিপতি সম্রাট আকবর। ইতিহাসে যোগ হলো এক নতুন মাত্রা
দীর্ঘ শাসনামলে সম্রাট আকবর এতোটাই সফল ছিলেন যে, ভারতীয় উপমহাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ড জুড়ে তার সাম্রাজ্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই পরবর্তী প্রজন্ম এবং বংশধর তার কীর্তিগাথা ও কাহিনী শুধু হিন্দুস্তানেই নয়- সমগ্ৰ ভারতবর্ষে প্রচার করেছে। আকবরের কাজের ধারাবাহিকতা ছিল নিখুঁত এবং অনন্য। তাঁর শাসনামলে ঐতিহ্য, ক্ষমতা এবং সাংস্কৃতিক মিলনের সেতুবন্ধন রচিত হয়েছিল। তিনি যে শুধু শক্রিকে পরাস্ত করেছেন অথবা দক্ষভাবে তাঁর সাম্রাজ্য পরিচালনা করেছেন তা-ই নয়, সেইসাথে সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নতি সাধনেও একনিষ্ঠ ছিলেন।
আকবর ছিলেন একজন সফল যোদ্ধা। শক্রকে কীভাবে সহজে ঘায়েল করা সম্ভব তা তিনি ভালোই জানতেন। তাঁর বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্রও হয়েছিল। দুগ্ধভ্রাতা আদম খান তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন তাঁরই হেরেমখানায়। কিন্তু তা সফল হয়নি
মোগল সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন নিয়ে যতো বই, দলিলপত্র উপস্থাপিত হয়েছে তাতে রয়েছে সামরিক শাসন, তাদের ঔদ্ধত্ব, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং শাসনক্ষমতা দখল ইত্যাদি। এর সমস্ত কিছুই রুলার অভ দ্য ওয়ার্ল্ড বইতে তুলে ধরা হয়েছে। এই বইয়ের প্রতিটি স্তরে লেখক চেষ্টা করেছেন সম্রাট আকবরের প্রকৃত রূপটি তুলে ধরার জন্য। এ সম্বন্ধে বাস্তব তথ্যচিত্র তুলে ধরাই বইটি রচনার মূল উদ্দেশ্য।
এস্পায়ার অব দ্য মোগল ট্রেইটরস ইন দ্য শ্যাডোস
আত্মপ্রত্যয়ী একজন নতুন সম্রাট আওরঙ্গজেব, ভারতের ঝলমলে ময়ুর সিংহাসনে আরোহণ করলেন। বৃদ্ধ পিতা জীবিত থাকাকালেই তিনি তার হাত থেকে এই সিংহাসন ছিনিয়ে নিলেন। এর জন্য বহু রক্ত দিয়ে তাকে মূল্যশোধ করতে হয়েছেঃ গৃহযুদ্ধের সময় ভাইদের খুঁজে বের করে। তাদের হত্যা করেছেন। এখন মোগল সাম্রাজ্যকে সত্যিকার পথে ফিরিয়ে এনে নতুন গৌরব অর্জন করতে হবে। তবে বিশাল ক্ষমতার প্রয়োগ মানুষকে নিঃসঙ্গ করে দেয়, চারদিকে শত্ৰু, ছেলেদের নয়। তাকে অবশ্যই নিজের উপর আর সেই জ্ঞানের উপর আস্থা রাখতে হবে, যার দ্বারা যুদ্ধের ময়দান ছাড়াও আরো অন্য উপায়ে একজন মানুষকে বশ করা যায়।
তবে যতই বছর পার হতে লাগলো, স্মৃতি তাঁর পিছু ছাড়লো না- সেই বাবার দুঃখময় স্মৃতি, যিনি কখনও তাঁকে ভালোবাসেন নি; মায়ের কথা, যিনি চিরশায়িত আছেন তাজমহলে; যে ভাইদের হত্যা করা হয়েছে আর যে ছেলে-মেয়েদেরকে অন্ধকার কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তিনি নিজেকে সাস্তুনা দেন, প্রয়োজনেই সব করা হয়েছে, এমনকি ন্যায়নীতির কারণেও। তবে আল্লাহ কীভাবে তাঁর বিছার করবেন…?
এম্পায়ার অব দ্য মোগল দ্য সার্পেন্টস্ টুথ
নতুন মোগল সম্রাট শাহজাহান একশত মিলিয়ন আত্মা নিয়ে গর্বিত অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী একটি সাম্রাজ্যে রাজত্ব করে গেছেন । সিংহাসন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন পূর্বপুরুষদের ভয়ংকর সিংহাসন অথবা কফিন, ঐতিহ্য : চেঙ্গিস ও তৈমুরলেইনের বংশধর। মোগলরা ভারতে আসার পর থেকে ভাই-ভাইয়ের আর পুত্র লড়েলে পিতার সাথে পুরস্কারের আশায় আর শাহজাহানও এর। ব্যতিক্রম ছিলেন না।
রাজত্বকালের প্রারম্ভেই শাহজাহানের জন্য সময় হয়ে পড়ে সিংহাসন সুরক্ষার জন্য শত্রুদেরকে নির্মল করে দেয়ার। এর পরিবর্তে, সুন্দরী পত্নী মমতাজের মৃত্যুতে ভেঙে পড়ে ধ্যান-জ্ঞান দিয়ে শুরু করেন। তাদের নিপুণ ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ এক মহাকাব্যিক স্তম্ভ নির্মাণ কাজী : তাজমহল ।
দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে পুত্রদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন শাহজাহান। তাই তাদের মাঝে গড়ে ওঠা প্রতিদ্বন্দ্বিতীর বস্তুত ঘূণার আঁচ পাননি তিনি, এরপর সম্রাট অসুস্থ হয়ে পড়ার পরে শুরু হয়। গৃহযুদ্ধ–নির্মম, নিষ্ঠুর আর নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য সাম্রাজ্যের ভিত্তি কেঁপে ওঠা শুরু করে ।
অ্যাম্পেরার অব দ্য মোগল ব্রাদার্স অ্যাট ওয়ার
১৫৩০ সাল, ভারতবর্ষের উত্তরাঞ্চলের শহর, আগ্রা। হুমায়ুন, সদ্য অভিষিক্ত দ্বিতীয় মোগল সম্রাট। নিঃসন্দেহে একজন ভাগ্যবান ব্যক্তি। তাঁর আব্বাজান বাবর, তাঁর জন্য অঢেল প্রাচুর্য, গৌরব এবং সেই সাথে খাইবার গিরিপথের দক্ষিণে হাজার মাইল প্রসারিত একটা সাম্রাজ্য রেখে ইন্তেকাল করেছেন। তাঁকে এখন অবশ্যই উত্তরাধিকার সূত্রেপ্রাপ্ত এই সাম্রাজ্য মজবুত করে গড়ে তুলতে এবং মোগলদের তাঁদের পূর্বপুরুষ, তৈমুরের উপযুক্ত হিসেবে প্রমাণ করতে হবে।
কিন্তু হুমায়ুন নিজের অজান্তে ইতিমধ্যে ভয়ঙ্কর এক বিপদে অধঃপতিত হয়েছে। তাঁর সৎ ভাইয়েরা তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছে; তাঁদের ধারণা মোগল সেনাবাহিনীর অধিনায়কত্ব করার জন্য আর তাঁদের আরও গৌরবময় সম্মান দান করার মতো যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি, ইচ্ছা আর নিষ্ঠুরতার অভাব রয়েছে।
সম্ভবত তাঁদের কথাই ঠিক। হুমায়ুন অচিরেই ভয়ঙ্কর লড়াইয়ের মাঝে নিজেকে আবিস্কার করবে; নিজের সিংহাসনের জন্য না, নিজের জীবন বাঁচাতে, নিজের সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তাঁকে প্রাণপণে লড়তে হবে।
এম্পায়ার অভ্ দা মোগল দি টেনটেড থ্রোন্
জাহাঙ্গীর ভারত উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলের বিজয়দীপ্ত শাসক, সর্বনাশ বুঝি ঘনিয়ে এসেছে। সম্পদ আর নির্মমতার কোনো মাত্রাই- মোগল সম্রাট হিসেবে দুটাতেই তার বিপুল এখতিয়ার- ক্ষমতার জন্য যেকোনো মূল্য পরিশোধে, নিজ সন্তানের অভিপ্রায় থেকে তাকে সুরক্ষা দিতে অপরাগ ।
গৌরবান্বিত মোগল প্রতীয়মান সিংহাসন এর অকল্পনীয় ঐশ্বর্য আর কৌটিক প্রজা সব কিছুই প্রতীয়মান রক্তপাত আর বিশ্বাসঘাতকতার যোগ্য; এর কারণে পিতার বিরুদ্ধে পুত্র অস্ত্র ধারণ করে আর ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাই, যাদের নির্মম নৃশংসতা। আর রোমহর্ষক ছিলনা। একে অন্যের পরিপূরক। জাহাঙ্গীর একদা নিজের পিতার বিরুদ্ধে সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছিল । সে । এখন আরেকটা সম্ভাব্য রক্তাক্ত প্রান্তরের মুখোমুখি সন্তানদের ভেতর যোগ্যতম খুররম |
সর্বনাশের তখনও সম্ভাবনা শেষ হয়নি। মহান তৈমুরের আর চরম নির্মমতার অধিকারী । একই সাথে আফিম আর সুরার প্রতি রয়েছে তাদের সবারই সমান দুর্বলতা। জাহাঙ্গীর তার প্রতিভাবান স্ত্রী মেহেরুন্নিসাকে একবার পরীক্ষা করতে চায় । কিন্তু সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেয়ার জন্য সে বডডবেশি আগ্রহী । তার আগ্রহ এতটাই প্রবল যে সিংহাসন নিজের কুক্ষিগত রাখতে সে খুররমের অল্পবয়সী সন্তানদের বন্দি করতে দ্বিধাবোধ করে না ।
আর অন্যদিকে খুররম আর তার অন্য সৎভাইয়েরা প্রত্যেকে তখনও তাদের পিতার উত্তরাধিকারী হতে কৃতসংকল্প হওয়ায় মোগল সিংহাসনের জন্য আরও ৷ পূর্বে যেকোনো সময়ের চেয়ে নৃশংস রক্তাক্ত যুদ্ধের । সম্ভাবনা প্রবল হয়ে ওঠে- যা হয়তো স্বয়ং তৈমুরের…