কবি মহাদেব সাহার একটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ‘চাই বিষ অমরতা’। এই কাব্যগ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৫ সালে। এরপর বইটির দশম সংস্করণ প্রকাশিত হয় সাহিত্যদেশ থেকে, বইমেলা ২০১৪ সালে। বইটিতে ৪৪টি কবিতা রয়েছে। বাংলা ভাষার কবিতার পাঠকদের মধ্যে মহাদেব সাহার কবিতার একটি অনুকূল পাঠকশ্রেণি যা আছে তা এ বইয়ের সংস্করণ দেখলেই বোঝা যায়। তিনি রোমান্টিক গীতিকবিতার জন্য বেশ জনপ্রিয়। তার কবিতায় তীব্র আবেগ পাঠকের মনোযোগ চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে। ‘ইচ্ছে করে, কেন ইচ্ছে করে একদিন উড়ে যাবো, ফিরেও আসবো না শুধু পড়ে রবে খাঁচা, খাঁচাতেই সম্ভব করেছি বাঁচা এই উড়ে যাওয়া, আর ফিরেও আসবো না।’ (ইচ্ছে করে, কেন ইচ্ছে করে/১৯) সূচিবদ্ধ কবিতাগুলো অধিকাংশ কবিতাই কোন না কোন কবিকে উৎসর্গ করে এবং স্মরণ করে লেখা হয়েছে। এসব কবিদের মধ্যে রয়েছেন- শহীদ কাদরী, সানাউল হক খান, জাহিদুল হক, মুহম্মদ নুরুল হুদা, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদসহ অনেক পরিচিত ও বিখ্যাত কবিদের। এসব কবিতায় অভিজ্ঞতা, স্মৃতি আর দ্রোহের নিরব স্রোতধারার ধারার ধ্বনি শোনা যায়। কবি খুব কাছ থেকে জীবনকে আলতো ছুঁয়ে বলে যাচ্ছেন মহাজীবনের কথা। চিরচেনা জগৎকে উল্টেপাল্টে কোথায় যেনো মিলিয়ে যাচ্ছেন! ‘কিন্তু পুনর্জন্ম নাই; একবার জন্মাই মরে যাই। গোলাপ ও কবির মধ্যে একটু সৌহার্দ্য, এইটুকু মিল এইভাবে হাওয়ায় হারাবে।’ (গোলাপের বংশে জন্ম/৪১) মহাদেব সাহার কবিতায় নারী ও প্রকৃতির সাথে জীবনবোধে এক মিলনমোহনা তৈরি করে। মনে হয় কাছ থেকে একটি পরিচিত কণ্ঠ কানে কানে বলে যায় ভালোবাসার কথা, ভালোলাগার কথা। কবিতার আকার আকৃতি, ছন্দ ভাষার কোন বাধাই কবিকে দমিয়ে রাখতে পারে না। তার মনের অভ্যন্তরে যা ঝলকে ওঠে তাই তিনি কবিতা করে পাঠকের সামনে হাজির করেন। বইটির দশম সংস্করণের প্রচ্ছদ করেছেন চারু পিন্টু।