“তবুও বাঁধন” বইটির সম্পর্কে কিছু কথা:
মেঘা । উনিশ বছরের এক প্রত্যয়দীপ্ত তরুণী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। মাত্র দেড় বছর বয়সে তার পিতার সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে । মায়ের দ্বিতীয় স্বামী আজিজ সাহেবকেই সে পিতা হিসেবে জেনেছে এবং অপার পিতৃস্নেহে বড় হয়েছে । তার জন্মসনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপাের্টসহ সকল একাডেমিক সনদে সত্বাবারই নাম রয়েছে। মায়ের মৃত্যুর ছয় মাস পরে তার উনিশ বছর বয়সে আচমকা নেমে আসে কালােমেঘের ছায়া । আজিজ একদিন প্রকাশ করেন মেঘা তার সকন্যা। সত্ত্বাবার প্রস্তাবে মেঘার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তার মস্তিষ্কের নিউরনে ঝড় ওঠে। সেই অপ্রতিরােধ্য ঝড়েও ছিড়ে যায়নি মেঘার জীবনের শেকড়; ক্রোমােজমের মৌলিক সুতাের গিঁট, সামাজিক বাঁধনও । এই দুর্বিনীত তরুণীর অন্তঃস্থল থেকে দাপিয়ে বেরােয় সমুদ্রের গর্জন, ‘আমার আসল বাবাকে আমি দেখতে চাই!’
মেঘা এগিয়ে যেতে থাকে শেকড়ের সন্ধানে। আকস্মিক খােলা আকাশের দিকে তাকিয়ে তার মনে হলাে অসংখ্য ঘুড়ি সুতাের বাঁধন ছিড়ে এলােমেলাে উড়ে যাচ্ছে অসীম শূন্যে । আকাশে উড়ছে একঝাঁক পরিযায়ী পাখিও। ঘুড়ি উড়ছে তাদের সঙ্গে । ঘুড়ির বাঁধন নেই । পাখির ঝাঁকের মাধ্যে কি বাঁধন আছে একে অপরের জন্য? এমন সার বেঁধে কীভাবে উড়ে যায় তারা শূন্য আকাশে! কোথায় যায়? কোথায় তাদের ঠিকানা? বাঁধন-ছেড়া ঘুড়ির ঠিকানা নেই, পাখির ঠিকানা আছে। নিজেকে এ মুহূর্তে বাঁধন-ছেড়া উড়ে যাওয়া ঘুড়ির মতােই মনে হলাে। পাখিদের মতাে দল বেঁধে এ উড়াল পথে কি একসঙ্গেই থাকবে দুই যমজ শিশু, সৎ ভাই-বােন রােদ আর বৃষ্টি? নাকি তারাও উড়াল দেবে বড় হয়ে আপন পথে? নাকি আধেক জেনিটিক টানেও তারা থাকবে সাথে? নাকি একসঙ্গে থাকবে মমতা আর সামাজিক বাধনের মায়া জালে আটকে?
বড় একটা দীর্ঘশ্বাস বেরােল মেঘার বুক চিরে । পাথরচাপা কষ্টটা নড়ে উঠলেও চাপ কমে গেল না। সে টের পেল পাথরে ফাটল ধরেছে। সেই ফাটল দিয়ে বেরােচ্ছে আগুনস্রোত-সােতের ওপর থেকে অন্যরকম হলুদাভ এক আভাও। সে-আভায় মেঘা আবিষ্কার করল আসল বাবার ঘরের আরেক আদুরে সৎবােন চাদনি ও ভার্সিটি প্রাঙ্গণের সহপাঠী মামুনকে । নানির ঢেলে দেওয়া অসীম সাহস আর আসল জন্মসনদ ক্রোমােজমের ব্লুপ্রিন্টের আলাে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে সে; জয় করতে থাকে জটিল পথে গেঁড়ে থাকা তারকাটার মতাে সকল বাধা ।