“কালবেলা” বইটি সম্পর্কে কিছু কথা:
কলকাতায় পা দিয়েই অনিমেষ দেখল রাস্তায় ট্রাম জ্বলছে, গুলি চলছে। মফস্বল থেকে আসা এই তরুণটি সেদিন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল। তারপর আর পাঁচটা মানুষের মতাে গা ভাসিয়ে ভেসে যেতে যেতে হঠাৎ তার জীবনের মােড় পাল্টালাে। ছাত্র-রাজনীতি তাকে নিয়ে গেল জটিল আবর্তে । দেশের মানুষের পাশে দাড়ানাের দুর্বার বাসনায় বিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির পতাকার নীচে গিয়ে দাঁড়াল অনিমেষ। কিন্তু মনুষ্যত্ব এবং মানবিক মূল্যবােধ তাকে সরিয়ে নিয়ে এল উগ্র রাজনীতিতে। উত্তাল আগুনে ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে দগ্ধ করে সে দেখল, দাহ্যবস্তুর কোনও সৃষ্টিশীল ক্ষমতা নেই। পুলিশের নির্মম অত্যাচারে সে যখন বিকলাঙ্গ তখন বিপ্লবের শরিকরা হয় নিঃশেষ নয় গুছিয়ে নিয়েছে আখের। অনিমেষ অবাক হয়ে দেখল মাধবীলতাকে। মাধবীলতা কোনও রাজনীতি করেনি কখনও, শুধু তাকে ভালবেসে আলােকস্তম্ভের মতাে একা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। খরতপ্ত মধ্যাহ্নে যে এক গ্লাস শীতল পানীয়ের চেয়ে বেশি কিছু হতে চায় না। বাংলাদেশের এই মেয়ে যে কিনা শুধু ধূপের মতাে নিজেকে পােড়ায় আগামীকালকে সুন্দর করতে। দেশ গড়ার জন্যে বিপ্লবের নিষ্ফল হতাশায় ডুবে যেতে যেতে অনিমেষ আবিষ্কার করেছিল বিপ্লবের আর এক নাম মাধবীলতা। দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রকাশের সময় এই দুটি চরিত্র লক্ষ পাঠকের ভালবাসা পেয়েছিল। কালজয়ী উপন্যাসের এইখানেই সার্থকতা।