“দেবপাল” বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা:
দেবপাল উপন্যাসটি পূর্বভারতের পাল রাজ্যের সুদীর্ঘ চারশাে বছরের ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। পালরাজবংশের নৃপতিদের মধ্যে দেবপাল দক্ষতা ও নৈপুণ্যগুণে অন্য সবাইকে ছাড়িয়ে এক অনন্য ইতিহাস গড়ে তুলেছিলেন। সম্রাট অশােকের পর এ ভূখণ্ডে এত বড় সাম্রাজ্য গড়ে তােলা আর কারাে পক্ষে সম্ভব হয়নি। পালরাজ্যটি পূর্বে চীন সীমান্ত ও পশ্চিমে বর্তমান আফগান সীমান্ত প্রায় ছুঁয়েছিল। বাংলা-বিহারকে কেন্দ্র করে ভারতবর্ষে এত বড় সাম্রাজ্য কখনােই ছিল না। বলা যায় পালরাজাদের সময়টাই বঙ্গালদের শ্রেষ্ঠ সময়। আমাদের অসামান্য মানসিক কৃতিত্ব যে নিজেদের বীরদের প্রশংসা না করে দূরদেশের প্রভুদের পূজা দিতে বেশি ভালােবাসি আমরা। যে বখতিয়ারের কাছে আমাদের স্বাধীনতা খর্ব হয়েছিল তার বীরত্বগাথা প্রচার করি। অথচ রাজা লক্ষণ সেনের গায়ে পালিয়ে যাওয়ার কলঙ্ক লেপন করতে কুণ্ঠিত হই না।
ইতিহাস বিস্মৃতি জন্ম দেয় ইতিহাস বিকৃতি। সাম্প্রতিক কালেও এর প্রভাব দেখা যায়।
বঙ্গাল রাজা দেবপাল অসীম কৃতিত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে তাঁর সাম্রাজ্যটা গড়ে তুলেছিলেন। অথচ প্রকৃত উত্তরাধিকারী রেখে যেতে ব্যর্থ হওয়ায় পরবর্তী কয়েকশাে বছরে তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। উপন্যাসটির ভেতর ঐ সময়টাকে ধারণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
ত্রিকোণ ভারতবর্ষ প্রকৃতপক্ষে তিনটি বিশাল সাম্রাজ্যের একীভূত রূপ। পূর্বভারত, পশ্চিমভারত ও দক্ষিণভারত প্রকৃত অর্থেই তিনটি দেশ। ঐতিহাসিক কাল থেকে এই তিনটি অঞ্চল পরস্পর ঠোকাঠুকি করে নিজেদের আত্মবিনাশ ডেকে এনেছে। ফলে ভিনদেশীয়রা এখানে এক উগ্র সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল। এসবের যথাসম্ভব বিশেষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে।
পাঠক পালরাজাদের চারশাে বছরের ইতিহাসের ভেতর কিছু সময়ের জন্য হলেও বাঙালির প্রকৃত বীর, নিজেদের মূল সূত্র ও ভুলে যাওয়া ইতিহাসের কিছুটা সন্ধান পাবেন।