“উপন্যাস সমগ্র ১৪তম খণ্ড” বইটির ফ্ল্যাপের লেখাঃ
সমকালীন কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে হুমায়ূন আহমেদ এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। গ্রন্থজগতের পরিসংখ্যান এই সত্য প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই কথাশিল্পীর পাঠকমনােরঞ্জনের ক্ষমতা প্রায় কিংবদন্তিতুল্য। কিশােরবয়সী থেকে বৃদ্ধ, স্বল্পশিক্ষিত থেকে বুদ্ধিজীবী পণ্ডিতসকলেই তাঁর উপন্যাসের পাঠক, অথবা টেলিভিশনের পর্দায় তাঁর কাহিনীর নাট্যরূপায়ণের বিমুগ্ধ দর্শক। কোন ক্ষমতায় এভাবে সকলকে কাছে টানেন হুমায়ুন আহমেদ? চিত্রল গতিময় সহজ ভাষাবিন্যাস। অভাবনীয় ঘটনা বিশ্বাসযােগ্যভাবে ঘটানাের মনােহারী কৌশল। কল্পনা হার মেনে যায়। এমন অকল্পনীয় বিদ্যুভি সংলাপ। এবং তার কাহিনীতে ছড়ানাে জীবন কখনােই আমাদের চেনা মধ্যবিত্ত সমাজসত্যের বাইরে ছােটাছুটি করে না। মধ্যবিত্ত-জীবনের আশা নিরাশা অনিশ্চিতি এবং দোলাচলপ্রবণ মূল্যবােধ, তার সামান্য লাভ ও সামান্য ক্ষতির বন্ধনে আততিময় অস্তিত্ব। হুমায়ুন আহমেদের যে-কোনাে উপন্যাস ধারণ করে আছে তার সৃজনীসত্তার মনন-কল্পনার এ-সকল উপাদান। সাধারণ মানুষের কাতর জীবন চূর্ণকণায় ছড়িয়ে থাকে তাঁর লেখায় ।। প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ যখন বেরােয়, তখন প্রথিতযশা অধ্যাপক ডক্টর আহমদ শরীফ লিখেছিলেন, “হুমায়ুন আহমেদ বয়সে তরুণ, মনে প্রাচীন দ্রষ্টা, মেজাজে জীবনরসিক, স্বভাবে রূপদর্শী, যােগ্যতায় দক্ষ রূপকার। ভবিষ্যতে তিনি বিশিষ্ট জীবনশিল্পী হবেন—এই বিশ্বাস ও প্রত্যাশা নিয়ে অপেক্ষা করব।” এ-ভাবেই যাত্রা শুরু হয়েছিল হুমায়ুন আহমেদের। তারপর ক্রমাগত পথচলার প্রবাহে তিনি উপন্যাস, গল্প, নাটক, কল্পবিজ্ঞান, রম্যরচনা এবং শিশুকিশাের গ্রন্থসমূহ উপহার দিয়েছেন এ-দেশের পাঠকসমাজকে। পণ্ডিত সমালােচক ও হৃদয়বান গল্পপ্রেমিক উভয়েরই প্রত্যাশা তিনি পূরণ করেছেন। একই সঙ্গে অতিপ্রজ অথচ শিল্পরুচিময় লেখক তাঁর মতাে আর কেউ এই মুহুর্তে আছেন কি না সন্দেহ। প্রতীক প্রকাশনা সংস্থার আনন্দ ও গর্ব যে, হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসসমগ্র বিভিন্ন খণ্ডে ক্রমান্বয়ে প্রকাশ করার দায়িত্ব সে নিতে পেরেছে।