“অর্জুন এবং চাইনিজ সিগারেট” বইটিতে লেখা কিছু অংশ: কাল রাত্রে পরপর কয়েকটা বোমা বিকট শব্দে ফেটেছিল। শহরের এদিকটায় যাঁরা বাস করেন, যেমন সেনপাড়া, হাকিমপাড়া বা আদালত এলাকার মানুষ ওই শব্দের সঙ্গে জন্ম ইস্তক পরিচিত। শুকনো খটখটে তিস্তায় যখন বালি ওড়ে, কাশের জঙ্গল যখন মাথাচাড়া দেয়, নদীর ধারা যখন শীর্ণ থেকে শীর্ণতর হয়ে আসে, তখন পাহাড়ে বৃষ্টি নামলেও সমতলের আকাশে এক ফোঁটা মেঘ দেখা যায় না। এইরকম সময়ে আগাম জানান না দিয়ে আচমকা মধ্যরাতে তিস্তার শুকনো পাঁজরা ফাটিয়ে বোমার বিকট আওয়াজ উঠে আসে। শহরের তিন পাড়ার মানুষ জানে, কাল ভোর ভোর অন্ধকারে যারা তিস্তার ধার ঘেঁষে বেড়াতে যাবেন, তাঁরা দেখতে পাবেন তিস্তার ওপরের বালির স্তর ভিজে গেছে, বাতাসের দাপটও তাকে ওড়াতে পারছে না। তারপর যত বেলা বাড়বে, বালির নীচ দিয়ে চুইয়ে আসা জল ওপরে উঠে আসবে। গত রাতে বালির নীচে জমে থাকা বাতাস যা গ্যাসের মতো চেপেছিল, তা চুইয়ে আসা জলের চাপে ঊর্ধ্বমুখী হতেই বালির স্তর ফেটে বোমার বিকট শব্দ তৈরি করেছিল।
কিন্তু প্রতিবছরের এই অভিজ্ঞতার সঙ্গে এবছর প্রাতঃভ্রমণকারীরা কোনও মিল দেখতে পেলেন না। তিস্তার বুকে এই ভোরেও শুকনো বালি উড়ছে, কাশগাছগুলো নির্বিকার দুলছে। কোথাও বালি ভিজে যায়নি। শুধু তিস্তার গায়ে সরকারি বাড়িটা, যা বাতিল হয়ে পড়ে ছিল, যার জানলা-দরজা প্রয়োজন পড়ায় মানুষ গোপনে খুলে নিয়ে….