সারকুলার রােড, কলকাতা, ১৮৫৫ সাল।এখন যেখানে গড়ে উঠেছে মেয়েদের একটি কলেজ কুইন ভিক্টোরিয়ার নামে, অদূরেই অতি ব্যস্ত শেয়ালদা স্টেশান। বৈঠকখানা বাজার, আরাে কত কি, তখন জনশূন্য খােলামেলা একটি অঞ্চল। ইংরেজের রাজধানী মােটামুটি বেশ জমে উঠছে। নানারকম এটা-সেটা নিয়ে। বাঙালিরা বেশ বশে এসে গেছে। ইংরেজরা তাদের স্টাডি করে ফেলেছে। দাস তৈরি করার বেশ ভালাে ‘মেটাল’। তবে বকলশটা যেন রত্নখচিত হয়। বেশ জেল্লা থাকা চাই। নানারকম খেতাব-টেতাব দিয়ে একটা অভিজাত শ্রেণি ইংরেজরা তৈরি করে ফেলেছে। বাঙালিরা ফার্সি ছেড়ে ইংরেজি শিখতে শুরু করেছে। ডিরােজিও খুব অল্প বয়সে কলকাতার বিখ্যাত কলেরায় মারা গেলেও একদল অন্যরকমের যুবগােষ্ঠী তৈরি করে গিয়েছিলেন। যাঁদের বলা যেতে পারে বুদ্ধিজীবী। বিদ্রোহী। আমরা বস্তাপচা হিন্দু সংস্কার মানি না। মানিকতলার বাজারে সময় সময় ফলুই মাছ বিক্রি হয়। সুন্দর দৃশ্য। বড় কাঠের ডাব্বায় জল। ঝকঝকে রুপাের মতাে ভীষণ ছটফটে অশান্ত। ফলুই। জল ছেড়ে লাফিয়ে উঠছে তিন চার হাত উঁচুতে। পরক্ষণেই ডাব্বার জলেই পড়ছে। জল ছেড়ে বাইরে চলে যাচ্ছে না। “ইয়ং বেঙ্গল’ও সেইরকম। হিন্দু ধর্মের ডাব্বাতেই লম্ফ-ঝম্প। দু-একজন খ্রিস্টান হচ্ছেন। পরে পস্তাচ্ছেন। | শহর মানে মানুষ। সমাজ। স্তর। ওপরতলার মানুষ চাষা নয়। ব্যবসায়ী। বণিক। ইংরেজরাও বণিক হয়েই এসেছিল। প্রথম লটে লর্ড, লেড়িরা আসেননি। ক্লাইব সায়েব ফঁকতালে বাংলা জয় করে জাতে উঠলেন। দেশে ফিরে আত্মহত্যা করলেন। বাঙালিদের মনে হল, জাব্বা-জোব্বা পরা মুসলমান নবাবদের চেয়ে সাদা চামড়া অনেক ভাল।