নারী অধিকার সম্বলিত এ মূল্যবান গ্রন্থটি যদি আরো কয়েক শতাব্দী আগে লেখা হতো, তাহলে মুসলিম সমাজ অনেক বেশি উপকৃত হতো। কেননা মুসলমানরা নারীদের অধিকারের ব্যাপারে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা থেকে অনেক আগেই দূরে সরে গিয়েছিল। এর পরিবর্তে তাদের মধ্যে প্রবেশ করেছিল নানাবিধ কুসংস্কার।
বানোয়াট হাদীস ও মনগড়া ভিত্তিহীন রেওয়ায়াতসমূহের উদ্ধৃতির মাধ্যমে নারী সমাজকে জাগতিক ও পারলৌকিক উভয় দিক দিয়ে গাফলতির গভীর তিমিরে নিমজ্জিত করা হয়েছিল। নারী শিক্ষা অপরাধে পরিণত হয়েছিল। তাদের মসজিদে জামাতের সাথে নামায পড়া হয়ে উঠেছিল গুনাহর কাজ। মুসলিম সমাজের ঘটনাবলী সম্পর্কে তাদের ওয়াকিফহাল হওয়া বা সমাজের বর্তমান ও ভবিষ্যত কর্মকান্ডে তাদের অংশগ্রহণ করার কথা তো কল্পনাই করা যায় না। সমাজে সর্বত্রই তারা ছিল চরম অবমাননার শিকার। তাদের আর্থ-সামাজিক ও নৈতিক অধিকারও হরণ করা হয়েছিল।
কোন রকম কাটছাঁট বা অতিরঞ্জন ছাড়াই রসূলের (স) আদর্শে উদ্বুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ভারসাম্যপূর্ণভাবে বইটি লেখা হয়েছে। নিঃসন্দেহে মুসলিম সমাজে একটা রেফারেন্স গ্রন্থ হিসেবে বইটি সমাদৃত হবে। লেখক এ গ্রন্থের মাধ্যমে নারী অধিকার সংক্রান্ত ইসলামের নিগূঢ় সত্য থেকে যথার্থ মাইলফলক চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। এ গ্রন্থটির মাধ্যমে পাশ্চাত্য সভ্যতার অন্ধ অনুসরণ থেকে মুসলমানদেরকে সতর্ক করার সাথে সাথে আধুনিকতা ও প্রগতির নামে নৈতিকতা ও চরিত্রবিধ্বংসী তথাকথিত সভ্যতাকে হুশিয়ারও করে দিয়েছেন।
এ সভ্যতা আমাদের অভ্যন্তরে সুদূর প্রসারী শিকড় গেড়েছে। আমরা তার হাত থেকে মুক্তি চাই একথা ঠিক। কিন্তু তাই বলে তার বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে পুনরায় অজ্ঞতা, অন্ধত্ব ও ভিত্তিহীন কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ হতে পারি না। বরং আমাদের আল্লাহর রসূলের (স.) জীবনাদর্শ এবং খোলাফায়ে রাশেদীন ও সালাফে সালেহীনের প্রদর্শিত পথের অনুসরণের মাধ্যমে কুরআন ও সুন্নাহর বাস্তব নমুনা পেশ করতে হবে। তবে একথা নিশ্চিত যে, মানুষের মনগড়া মতবাদ সৃষ্ট অজ্ঞতা ও মূর্খতার নীতিমালার অনুসরণ কোনোদিন মানবজাতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না।
এ গ্রন্থে মুসলিম নারীর ব্যক্তিত্ব, স্বাধিকার, মর্যাদা, পোশাক-পরিচ্ছদ ও সাজসজ্জা এবং পারিবারিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে তাদের ভূমিকা, পুরুষদের সাথে সাক্ষাতের ক্ষেত্র ও অবস্থা এবং সহী হাদীসের দলীল-প্রমাণাদি সহ অত্যন্ত নির্ভরযোগ্যভাবে সালাফে সালেহীন তথা সাহাবা কেরাম ও তাবে তাবেঈনদের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। সত্যিকার অর্থে মুসলিম নারীদের জন্য সঠিক ও তথ্যবহ একটা বিরল, মূল্যবান ও দীনী গ্রন্থ আমরা উপহার পেয়েছি।
এ গ্রন্থটি মুসলিম নারীর জন্য শরীয়তের বিধি-বিধানকে কষ্টদায়ক ও অতিরিক্ত ব্যাখ্যা হিসাবে পেশ না করে সহজ হিসাবে উপস্থাপন করেছে। লেখক কুরআন ও হাদীসমূহের অকাট্য দলীল-প্রমাণাদি খুঁজে বের করে ইসলামের মূল প্রাণসত্তার সাথে সামঞ্জস্য দেখে যথাযথভাবে সেগুলি উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। অকাট্য ও নির্ভুল যুক্তি ও তথ্য-প্রমাণাদি এবং সঠিক ব্যাখ্যার সন্নিবেশ করা নিসন্দেহে ইসলামী লাইব্রেরীসমূহের জন্য এক মূল্যবান সম্পদ।