“বিষাদ-সিন্ধু” বইটির মুখবন্ধ থেকে নেয়াঃ
চান্দ্রমাসের বৎসরের প্রথম মাসের নাম মহরম। হিজরী ৬১ সালের ৮ই মহরম তারিখে মদিনাধিপতি হােসেন ঘটনাক্রমে সপরিবারে কারবালাভূমিতে উপস্থিত হন; এবং এজিপ্রেরিত সৈন্যহস্তে রণক্ষেত্রে প্রাণত্যাগ করেন; সেই শােচনীয় ঘটনা মহরম নামে প্রসিদ্ধ হইয়াছে। ঐ ঘটনার মূল কি, এবং কি কারণে সেই ভয়ানক যুদ্ধ সংঘটিত হইয়াছিল, ইহার নিগূঢ় তত্ত্ব বােধ হয় অনেকেই অনবগত আছেন। পারস্য ও আরব্য গ্রন্থ হইতে মূল ঘটনার সারাংশ লইয়া “বিষাদ-সিন্ধু” বিরচিত হইল। প্রাচীন কাব্যগ্রন্থের অবিকল অনুবাদ করিয়া প্রাচীন কবিগণের রচনাকৌশল এবং শাস্ত্রের মর্যাদা রক্ষা করা অত্যন্ত দুরূহ। মাদৃশ লােকের পক্ষে তদ্বিষয়ের যথার্থ গৌরব রক্ষার আকাঙ্ক্ষা বামনের বিধু ধরেণের আকাঙ্ক্ষার ন্যায় এক প্রকার দুরাকাঙ্ক্ষা বলিতে হইবে। তবে মহরমের মূল ঘটনাটী বঙ্গভাষাপ্রিয় প্রিয় পাঠকপাঠিকাগণের সহজে হৃদয়ঙ্গম করিয়া দেওয়াই আমার একমাত্র মুখ্য উদ্দেশ্য। শাস্ত্রানুসারে পাপভয়ে ও সমাজের দৃঢ় বন্ধনে বাধ্য হইয়া “বিষাদ-সিন্ধু মধ্যে” কতকগুলি জাতীয় শব্দ ব্যবহার করিতে হইল। বিজ্ঞ-মণ্ডলী ইহাতে যদি কোন প্রকার দোষ বিবেচনা করেন, সদয়ভাবে মার্জনা করিবেন।