“ঝরা পালক” বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ
‘ঝরা পালক’ কাব্যগ্রন্থে শিল্পগত পরিশুদ্ধির অভাব হয়তাে আছে; কিন্তু এ পরিশুদ্ধিহীনতার জগৎ থেকে কবির অন্বেষণ শুরু হয়ে যায় পরবর্তীকালের জন্য। জীবনানন্দের বােধের জগতে ‘বনলতা সেন’ যদি চূড়ান্ত সিদ্ধি করায় ও করে, তবে ‘ঝরা পালকে তার সূচনা; আর ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’, ‘মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির; ‘রূপসী বাংলা’ ও ‘বেলা-অবেলা-কালবেলা’তে তার ক্রম-বিস্তাৰ্যমানতা। অর্থাৎ, ১৯২৭-২৮ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত জীবনানন্দের কাব্য ও মনন-সাধনার বিবর্তিত স্তর প্রতিভাত হয় উক্ত কাব্যগ্রন্থগুলির ভাবপ্রকাশে ও শিল্পগত কৌশলে। জীবনানন্দের প্রথম কাব্য ‘ঝরা পালকের’ (১৯৭২) অনেক কবিতায় সমকালীন কলকাতার অর্থনৈতিক স্থিতিহীনতার চিত্র অঙ্কিত। প্রথম মহাযুদ্ধোত্তর অর্থনৈতিক মন্দাবস্থায় বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠার ফলে গ্রামনির্ভর অর্থনীতিতে তীব্র আঘাত পরিলক্ষিত হচ্ছিল। অসম প্রতিযােগিতায় দেউলিয়া কুটিরশিল্পের অনেক শিল্পী এবং কৃষকরা কর্মসংস্থানের জন্য কলকাতায় আসতে শুরু করেছে। কলকাতার এ বিশেষ বৈশিষ্ট্য বর্ধিত জনতার চাপে বিপর্যস্ত রূপ জীবনানন্দকে আলােড়িত করে। অর্থনৈতিক দিকটি ব্যতীত ছিল ‘কল্লোলের কোলাহল’, মােহিতলাল-নজরুল, যতীন্দ্রনাথের কবিতার ভিন্ন কণ্ঠস্বর; রবীন্দ্রঅস্বীকার ও রবীন্দ্র-স্বকীরণ-এ দুই শিবিরে বিভক্ত কবি-মানসিকতার অমেয় পার্থক্য জীবনানন্দের ‘ঝরা পালক’-এ রূপায়িত হয়েছে।