তিনখণ্ডে সম্পন্ন এই গ্রন্থটির প্রথম খণ্ডেই প্রগতির ধারা কাকে বলে তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে প্রসঙ্গকথায় বলা হয়েছে, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যে সাহিত্য সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার স্বপক্ষে, পরবর্তীতে পাকিস্তানি শাসক শােষণ ও পাকিস্তানি ভাবাদর্শের বিরুদ্ধে, ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে, সামাজিক অনাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে, নারী মুক্তির স্বপক্ষে সেই সাহিত্যকেই প্রগতির ধারা বলা হয়েছে। উপরে উল্লেখিত যে কোন একটা বিষয় যদি কোন সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়ে থাকে এবং তা যদি পাঠকের মনে দাগ কাটতে সক্ষম হয় হবে সেটাকেও প্রগতির ধারার অন্তর্ভুক্ত করা হবে।” একই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে দ্বিতীয় খণ্ডেও। প্রথম খণ্ডে চর্যাপদ থেকে শুরু করে উনবিংশ শতাব্দির বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন বড় মাপের কবি ও লেখক ছাড়াও অন্যান্য কাব্য ও গদ্য সাহিত্যের উপর আলােকপাত করা হয়েছে। এ ছাড়াও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যার জীবনের অর্ধেক উনবিংশ শতাব্দিতে এবং অর্ধেক জীবন বিংশ শতাব্দিতে, সেই রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন দিকও আলােচনায় এসেছে। বিংশ শতাব্দীর কবি ও কথাসাহিত্যিক হওয়া সত্তেও কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও প্রথম খণ্ডের আলােচনায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। দ্বিতীয় খণ্ডের আলােচনার বিস্তৃতি বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত অবশ্য রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও শরৎচন্দ্র বাদে, কারণ তা ইতােপূর্বে প্রথম খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দ্বিতীয় খণ্ডে শুধু প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যই নয়, লােক সাহিত্য, যাত্রা, গণসঙ্গীত, মুখে মুখে চলে আসা গান, কবিগান ইত্যাদির উপরও একটি স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদ আছে। এই সকল জায়গায় যে সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী, শােষণ যন্ত্রণা বিরােধী এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বপক্ষে খুবই মূল্যবান উপাদান আছে, তা দেখানাের চেষ্টা হয়েছে।