দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত উপমহাদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিম প্রান্ত ও পূর্ব বাংলা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তান। যদিও ১৯৪০ সালে অনুষ্ঠিত লাহাের প্রস্ত বে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল নিয়ে পৃথক পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে তা হয় নি। বরং পাকিস্তান সৃষ্টির অব্যবহিত পরেই পাকিস্তান সরকারের পূর্ব বাংলায় ব্রিটিশ উপনিবেশিক কায়দায় ঔপনিবেশিক শােষণ প্রক্রিয়ার শুরু। যার ফলশ্রুতিতে অত্যল্পকালেই পূর্ব বাংলায় একটি নতুন জাতীয়তাবাদী বােধের উন্মেষ ঘটে। পাকিস্তানের পূর্ব অংশ পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি ঐতিহ্যিক চেতনার মূলধারাতেই মূলত পাকিস্তানের রাজনীতি আবর্তিত হতে থাকে। আমার এ গ্রন্থের সময়কাল ১৯৪৭ হতে ১৯৫৮ করার পক্ষে প্রধান যুক্তি হলাে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামাের মধ্যে পূর্ব বাংলার অন্তর্ভুক্তি ও ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক আইন জারির ফলে সকল রাজনৈতিক তৎপরতার অবসান ঘটে। আমার এ গ্রন্থের প্রধান বিষয় হলাে উপরােক্ত সময়কালে পূর্ব বাংলার রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলের কর্ম তৎপরতার স্বরূপ বিশ্লেষণ।
যদিও আমার এ গ্রন্থের বিধিবদ্ধ কালসীমা বিংশ শতাব্দীর চল্লিশ দশকের শেষপাদ থেকে পঞ্চাশ দশকের প্রায় শেষাংশ পর্যন্ত এক দশকের কালসীমায় নির্ধারিত হয়েছে। তথাপি আমার এ গ্রন্থের প্রারম্ভিক ভিত্তিমূল পরিব্যপ্ত হয়েছে বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্ন থেকে। অর্থাৎ বিগত শতাব্দীর ছয় দশকের রাজনৈতিক পরিক্রমার কর্মকাণ্ড। শুধু তাই নয় পূর্ব বাংলার নামকরণ কীভাবে হলাে? এর তথ্যানুসন্ধান করতে গিয়ে আমাকে এই নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনগােষ্ঠীর সুদীর্ঘ হাজার বছরের অতীত ইতিহাসের ওপরেও ছায়া আলােকপাত করতে হয়েছে। যদিও সমগ্র বাংলা থেকে বিচ্ছিন্ন করে শুধুমাত্র পূর্ব বাংলার ভৌগােলিক সীমাখণ্ডের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তথাপি সামগ্রিক অখণ্ড বাংলার পটভূমির মধ্যে থেকেই পূর্ব বাংলার নামকরণ নির্ণায়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার এই গ্রন্থের পূর্ববাংলার রাজনীতির অন্যতম অনুষঙ্গ ভাষা আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। সেই সাথে বাংলা ভাষার উৎস কথাও প্রাসঙ্গিকভাবে বলা হয়েছে।