রিয়াদুস সালেহীন

৳ 1.00

লেখক
প্রকাশক
ভাষা বাংলা
পৃষ্ঠার সংখ্যা ৫৬০
সংস্কার 1st Published, 2017
দেশ বাংলাদেশ

“রিয়াদুস সালেহীন” বইটির ভুমিকা থেকে নেয়াঃ
‘রিয়াদুস সালেহীন’ নামক এই সুবৃহৎ নির্বাচিত হাদীস সংকলন গ্রন্থটি। রচয়িতা কর্তৃক প্রদত্ত এই গ্রন্থের পুরাে নামটি হচ্ছে- ‘রিয়াদুস সালেহীন মিন কালামে সাইয়্যেদুল মুরসালিন’ অর্থাৎ, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র বাণী সম্ভার দ্বারা সুশােভিত পূণ্যবানদের উদ্যান। আর প্রকৃত অর্থেই নামের স্বার্থকতা এই অনন্য গ্রন্থটির ক্ষেত্রে যথার্থ। কেননা, বিগত দেড় হাজার বছরে যত হাদীস সংকলন গ্রন্থ রচিত হয়েছে তন্মধ্যে এই পরিসরে এতাে অধিক বিষয় সম্বলিত হাদীস গ্রন্থ অন্য কেউ রচনা করতে পারেননি, যা ‘রিয়াদুস সালেহীন’ নামক এই নির্বাচিত হাদীস সংকলন গ্রন্থটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর এই অসাধারন বৈশিষ্ট্যের জন্যই রিয়াদুস সালেহীনের প্রয়ােজনীয়তা ও গ্রহণযােগ্যতা কালের সীমানা অতিক্রম করে রচনাকাল ৬৭০ হিজরী থেকে ১৪৩৮ হিজরী অর্থাৎ, অদ্যাবধি সমান জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযােগ্যতার সাথে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে সমাদৃত হয়ে আসছে। পৃথিবীর এমন কোন জীবন্ত ভাষা নেই যে ভাষায় রিয়াদুস সালেহীনের একাধিক অনুবাদ প্রকাশিত হয়নি। গ্রন্থটির এই বিস্ময়কর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযােগ্যতার মূল কারণ হচ্ছে- যুগ চাহিদার আলােকে পবিত্র হাদীস শরীফের বৈচিত্রময় পরিচ্ছেদ তথা বিষয়বস্তু নির্বাচনের ক্ষেত্রে দক্ষতা। মানুষের দৈনন্দিন দ্বীনি যিন্দেগীর প্রয়ােজনীয়তার উপর গুরুত্বারােপ এবং ইসলামী জীবন-ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গরূপকে অত্যন্ত আকর্ষনীয় ও হৃদয়গ্রাহী উপায়ে উপস্থাপন। সেই সাথে ইমাম নববী (রাহ.) তাঁর এই গ্রন্থের প্রত্যেক পরিচ্ছেদের শুরুতে বিষয় সংশ্লিষ্ট পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ সংযােজন করে রিয়াদুস সালেহীনকে প্রয়ােজনীয়তার দৃষ্টিকোণ থেকে এমন এক অপরিহার্যতার পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যার বিকল্প নেই বললেই চলে। কালজয়ী হাদীস সংকলন গ্রন্থসমূহ বা ‘সিহাহ্ সিত্তা’ নামে বিগত হাজার বছরব্যাপী সর্ব মহলে স্বীকৃত ও গ্রহণযােগ্য ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ যথা : ১- সহীহ আল বুখারী, ২- সহীহ মুসলিম, ৩- সুনানে তিরমিযী, ৪সুনানে আবু দাউদ, ৫- সুনানে নাসায়ী ও ৬- সুনানে ইবনে মাজাহ্, এই সুবিখ্যাত ছয়টি হাদীস সংকলন গ্রন্থের প্রতিটি অধ্যায় থেকে সংকলক ইমাম নববী (রাহ.) অত্যন্ত দক্ষতার সাথে যথােপযুক্ত হাদীস নির্বাচন করে বিশটি কিতাব তথা অধ্যায়ের অন্তর্গত তিন’শ পচাত্তরটি স্বতন্ত্র পরিচ্ছেদে বিভক্ত করে তা ‘রিয়াদুস সালেহীন’ নামক এই গ্রন্থে সুবিন্যস্ত করেছেন।

তাঁর পূর্ণনাম মুহিউদ্দ্বীন আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনুশ শায়েখ আবু ইয়াহইয়া মুররি ইবনে হাসান ইবনে হুসাইন ইবনে মুহাম্মদ ইবনে জুম‘আ ইবনে হেযাম আল-হেযামী আন-নববী। ‘মুহিউদ্দ্বীন’ তাঁর উপাধি এবং ‘আবু যাকারিয়া’ হলো কুনিয়াত তথা উপনাম। তাঁর জীবদ্দশায় তিনি এতোটাই প্রসিদ্ধ ছিলেন এবং ইলম ও তাক্বওয়ার মানদণ্ডে এমন সমুন্নত হতে পেরেছিলেন যে, তাঁকে ‘মুহিউদ্দ্বীন মতান্তরে ‘মুহিউস্ সুন্নাহ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ৬৩১ হিজরীর মুহাররম মাসে দামেশকের নিকটবর্তী ‘নাওয়া’ নামক স্থানে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। জন্মস্থানের দিকে সম্পর্কিত করেই তাঁর নামের শেষে ‘নাওয়ায়ী’ বা ‘নববী’ উল্লেখ করা হয়। এ ব্যাপারটা স্বতঃসিদ্ধ ও প্রমাণিত যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর যেসব বান্দাদের দিয়ে দীন ও মানুষের মহান খেদমত করান, ছোটবেলা থেকেই তাদেরকে সেভাবেই গড়ে তোলেন। ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ’র ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। শৈশবে থেকেই তিনি ছিলেন আর সব শিশুদের চেয়ে আলাদা। অজপাড়া গ্রামে, নিম্নবিত্ত নিরক্ষর পরিবারে জন্ম নেওয়া সত্তে¡ও তাঁর সবটুকু ঝোঁক ছিলো ইলম অর্জনের দিকে। দোকানদার পিতা চাইতেন, ছেলে তার সাথে দোকানদারী করুক। কিন্তু তিনি পিতার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে দামেশকের ‘আর-রাওয়াহিয়্যাহ’ নামক প্রতিষ্ঠানে চলে যান ইলমের-অšে¦ষণে এবং আলেমদের সংস্পর্শে থাকার তাড়নায়। এখানে থেকেই তিনি ইলমের সবগুলো শাখায় নিজের উত্তরোত্তর ব্যুৎপত্তি ঘটান। ইমাম যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘তিনি (নববী) দিন-রাত্রির বেশির ভাগ সময় জ্ঞানার্জনে ব্যয় করতেন। মেধা ও পরিশ্রমের জন্য তাঁকে দিয়ে উদাহরণ পেশ করা হতো।’ সারাদিনে একবার খেতেন। এমনকি পথ চলার সময়টুকুতেও মনে মনে পড়া আওড়াতেন। ৬৫১ হিজরীতে একুশ বছর বয়সে তিনি পিতার সাথে হজ্জ পালন করার জন্য মক্কায় যান। এই সফরকালে তিনি মক্কা-মদীনার শ্রেষ্ঠ আলেমগণের সান্নিধ্যে আসেন এবং হাদীস শাস্ত্রে বিশেষ বুৎপত্তি অর্জন করেন। ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ যেসব ওস্তাদদের নিকট থেকে জ্ঞানার্জন করেছেন, তাঁদের মধ্যে মুহাম্মদ ইবনে আহমাদ আল-মাকদাসী, ইসমাইল ইবনে ইবরাহীম, আহমদ ইবনে আবদুদ্দায়েম, আবদুর রহমান আল-আন্বারী, ইবরাহীম ইবনে আলী আল-ওয়াসেতী প্রমূখ অন্যতম। ফিকহের ক্ষেত্রে নববী ছিলেন শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী। শুধু অনুসারীই নয়, বরং তিনি ছিলেন মাযহাবের প্রধান বিশ্লেষক ও ইমামদের একজন। ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ‘তিনি ছিলেন শায়খুল মাযহাব এবং তাঁর যমানার শ্রেষ্ঠতম ফকীহ’। যাহাবী বলেন, ‘তিনি ছিলেন মাযহাবের ব্যাখ্যাকারদের শিরোমনি’। তাঁর রচিত ‘রাওদাতুল ত্বালেবীন’কে শাফেয়ী মাযহাবের প্রধানতম ব্যাখ্যাগ্রন্থ ও তথ্যসূত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। অধিকাংশ শাফেয়ী আলেমদের মতো ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহও আকীদার ক্ষেত্রে ‘আশ‘আরী’ মতবাদের অনুসারী ছিলেন। যাহাবী, তাজউদ্দীন সুবকী, ইয়াফেয়ী-সহ তাঁর অপরাপর জীবনীকাররা এমনটাই উল্লেখ করেছেন। সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় তাঁর রচিত ‘আল মিনহাজ’ গ্রন্থে তিনি আশ‘আরী মতবাদসমূহকে ব্যাপকভাবে স্থান দিয়েছেন। ক্ষণজন্মা এই মহাত্মা বেঁচে ছিলেন মাত্র পয়তাল্লিশ বছর। কিন্তু এই স্বল্প সময়েও আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে দিয়ে দীন ও ইলমের যে বিশাল খেদমত করিয়েছেন, তা সত্যিই বিরল। ইলমের প্রায় প্রতিটি শাখাতেই তাঁর রচিত গ্রন্থ রয়েছে, যেগুলো কেয়ামত পর্যন্ত মানুষকে উপকার দিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ! বিশেষ করে ‘আল-আরবাঈন আন-নববীয়্যাহ’, ‘রিয়াদুস সালেহীন’ এবং ‘আল-আযকার’ এই তিনটি গ্রন্থ তো সর্বস্তরের মুসলিমের কাছেই সমানভাবে সমাদৃত এবং পঠিত। এছাড়া তাঁর রচিত বিখ্যাত গ্রন্থাবলির মধ্যে অন্যতম হলো, (১) আল-মিনহাজ ফি শারহে মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ; (২) রাওদাতুল ত্বালেবীন ওয়া উমদাতুল মুফতীন; (৩) মিনহাজুল ত্বালেবীন ওয়া উমদাতুল মুফতীন; (৪) আদাবুল মুফতি ওয়াল মুসতাফতি; (৫) তুহফাতু তুল্লাবিল ফাদায়েল; (৬) আত-ত্বিবইয়ান ফি আদাবে হামালাতিল কুরআন। (৭) আত-তাহরীর ফি আলফাযিত তানবীহ; (৮) আল-উমদাহ ফি তাসহিহিত তানবীহ; (৯) আল ইদ্বাহ ফিল মানাসিক; (১০) আত তাইসীর ফি মুখতাসারিল ইরশাদ; (১১) ইরশাদু তুল্লাবিল হাক্বায়েক; (১২) আল-ফাতাওয়া; (১৩) আল মিনহাজ ফি মুখতাসারিল মুহাররার; (১৪) দাকায়েকুল মিনহাজ; (১৫) মুখতাসারু আসাদিল গাবাহ; (১৬) মানাকিবুশ শাফেয়ী; (১৭) মুহেম্মাতুল আহকাম; (১৮) রিসালাহ ফি ক্বিসমাতিল গানাঈম; (১৯) খুলাসাতুল আহকাম; (২০) বুসতানুল আরেফীন। এছাড়া তাঁর রচিত অসমাপ্ত গ্রন্থের সংখ্যাও কম নয়। তন্মধ্যে ‘আল মাজুমু শারহুল মুহায্যাব’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর মৃত্যুর পর ইমাম সুবকী রাহিমাহুল্লাহ এবং তারপর শায়েখ মুহাম্মদ নজীব এই গ্রন্থের রচনা সমাপ্ত করেন। এছাড়া ‘জামেউস সুন্নাহ’, ‘শারহুত ত্বানবীহ’, ‘শারহুল ওয়াসিত’, ‘শারহুল বুখারী’, ‘শারহু সুনানি আবু দাউদ’, ‘আল-আহকাম’ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। ৬৭৬ হিজরীর রজব মাসের চব্বিশ তারিখে পয়তাল্লিশ বা ছেচল্লিশ বছর বয়সে এই মনীষী ইন্তেকাল করেন। তাজউদ্দীন সুবকী রাহেমাহুল্লাহ বলেন, ‘তাঁর মৃত্যুতে দামেশক ও তদ্সংলগ্ন শহরগুলো শোকে ডুবে গিয়েছিলো।’ জন্মস্থান ‘নাওয়া’তেই তাঁকে দাফন করা হয়। মহান আল্লাহ তাঁকে এবং তাঁর সকল খেদমতকে কবুল করুন।


বই সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসা বা মতামত থাকলে আমাদেরকে জানান
শেয়ার করুন

লেখকের অন্য বইসমূহ