“ইসলামের যাকাত বিধান-প্রথম খণ্ড” বইটির সম্পর্কে কিছু কথা:
মানুষের অর্থনৈতিক জীবনে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশেষত গরীব, নিঃস্ব ও অসহায় লােকদের জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান নিঃসন্দেহে একটি কঠিন সমস্যা। এই সমস্যাটির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন অর্থ ব্যবস্থায় কিছু কল্যাণধর্মী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সে সব পদক্ষেপ সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যে কোন নিশ্চয়তা বিধান করতে পারে নি। ফলে কল্যাণধর্মী বলে খ্যাত রাষ্ট্রগুলােতেও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও দারিদ্র্য বিমােচনের কর্মসূচী এখনাে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। দৃশ্যত কিছু কল্যাণধর্মী ব্যবস্থা গ্রহণ সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ অসহায় মানুষ সে সব দেশে চরম দুরাবস্থার মধ্যে বসবাস করছে।
ইসলাম আল্লাহর দেয়া এক পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। এ জীবন ব্যবস্থায় এক সুষম ও ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনীতি ছাড়াও সামাজিক ন্যায়বিচারকে নিশ্চিত করার জন্যে যাকাত-এর একটি চমত্তার কর্মসূচীর বিধান রাখা হয়েছে। সমাজের বিত্তবান ও সচ্ছল লােকদের বাড়তি সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ নিয়মিত আদায় করে দরিদ্র ও বঞ্চিত লােকদের মধ্যে যথাযথ বণ্টন করাই এ কর্মসূচীর প্রধান বৈশিষ্ট্য। বলাবাহুল্য, এটি যেমন একটি রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম, তেমনি ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদতও। তাই পবিত্র কুরআনের বহুতর স্থানে নামায প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে যাকাত প্রদানেরও আদেশ করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, যাকাত সম্পর্কে স্পষ্টতর ধারণার অভাবে এই কল্যাণময় ব্যবস্থাটি থেকে আমাদের সমাজ যথােচিতভাবে উপকৃত হতে পারছেনা।
আরব জাহানের স্বনামধন্য ইসলামী চিন্তাবিদ ও সুপণ্ডিত আল্লামা ইউসুফ আল-কারযাভী প্রণীত ‘ফিক্হুয যাকাত’ নামক বিশাল গ্রন্থটি এদিক থেকে আমাদের জন্যে এক পরম সম্পদ। যাকাত আদায়ের উৎসও ব্যয়ের খাতগুলাে অত্যন্ত পুংখানুপুংখভাবে বিবৃত করা হয়েছে দুই খণ্ডে বিভক্ত এই মূল্যবান গ্রন্থে। এ কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক আল্লামা মুহাম্মাদ আবদুর রহীম (রহ) ইসলামের যাকাত বিধান’ শিরােনামে এই অনন্য গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করে সময়ের এক বিরাট দাবি পূরণ করেছেন।