“ছোটগল্প” বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ
প্রথমে কালাে পাখিটাকে আমি দেখিনি। আমার লক্ষ ছিল একটা শাদা বগার ওপর। বগাটা ছিল বিশাল আর ধবধবে শাদা। নিশ্চিন্ত মনে ঘাড় বাঁকা করে স্বচ্ছ পানির ভিতর সে তার ধারালাে চঞ্চু উঁচু করে ঠোকর মারার জন্যে প্রস্তুত হয়েছিল। আমিও ধীরেসুস্থে পা ফেলেই যাচ্ছিলাম। বেশ একটু দূর থেকে গুলি করলেই যে বিসদৃশ পাখিটাকে ফেলা যাবে, এ ব্যাপারে আমার কোনাে সন্দেহ ছিল না। আর এছাড়া আমার তাড়াহুড়া না করার অন্য একটা কারণও ছিল। এ অঞ্চলে বালিহাঁস বা বটীকল জাতীয় লােভনীয় বড় পাখি, যা শিকারীরা দেখা মাত্রই সতর্ক হয়ে যায়, তা ছিল না। সারা মাঠ আর বিলজুড়ে কেবল কটা ধূসর কালিবগা আর ধলাবগা উড়ে বেড়াচ্ছে। আর ওড়াওড়ি করছে শালিকের ঝাক। তাদের কুৎসিত চিৎকারে কানে তালা লেগে যায়। পাশ দিয়ে গেলেই, উড়ে পালাতে গিয়ে মহাচেচামেচি জুড়ে দিচ্ছে। এই হতচ্ছাড়া শালিকগুলােকে নিয়ে কী করে যে জীবনানন্দ দাশ কবিতা লিখতে পারলেন, তা আমি এখনও বুঝে উঠতে পারিনি। আমি বন্দুকটাকে যথাসম্ভব নিস্পৃহভাবে ডান হাতে নিয়ে আস্তে পা ফেলে হেঁটে যাচ্ছিলাম। মাঠটা পার হয়ে বিলের কাছে পৌঁছতেই দেখলাম বিলও শুকিয়ে গেছে। কোথাও গর্তেটর্তে একটু আধটু পানি জমে থাকলেও সারা মাঠই হাঁটু সমা কাদাতে ভর্তি।
-আল মাহমুদ