“কত ঘরে দিলে ঠাঁই -১ম পর্ব” বইয়ের কথাঃ ছেলেবেলা। শহর নওগাঁ। মায়ের কোল, মাঠ, পার্ক, পুকুরের ঘাট। এক সারি ছোট বাড়ি। যমুনার কোল। সিরাজগঞ্জের গাঁ। ছুটে আসে বানের স্রোত। গা ভাসান তাতে। পানি বাড়ে। মাছ ধরা পড়ে। পাট পচে। শাপলা ফোটে। শরৎ। হেমন্ত আসে কলাইয়ের ক্ষেতে। শীত আসে হাড় কাঁপাতে। পিঠে পুলির দিন। বিছানার নীচে মালসায় আগুনের রাত। তার পরে সূর্যের তাপ বাড়ে। আল্লাহ মেঘ দে। আসে আম কুড়ানোর বৈশাখ। ঝড়ে ঘর কাঁপে। জ্যৈষ্ঠ আসে। আম লিচু পাকে। কাঠালের ভুতি গন্ধ ছড়ায়। রোজ সূর্য ওঠে ঈদগাহের ওপর দিয়ে। রোজ পথ চলা। নগ্ন পা। মসজিদ, এলিয়ট ব্রীজ, কদম গাছ, মাদ্রাসা। মাঠ, মড়াকাটা ঘর, ছোট নদী, ঘরে ফেরা। সন্ধ্যাবেলায় লণ্ঠন জ্বেলে পড়া। বুড়িগঙ্গার তীর। বক্সিবাজার। ঢাকা কলেজ, রেলপথ, য়ুনিভার্সিটি, সবুজ মাঠ রমনার। রক্তরাঙ্গা একুশে ফেব্রুয়ারী। সেন্ট্রাল জেলখানা, নতমাথা, ভালবাসা, বকুলের সারি। তোপখানা, কাকরাইল, এশিয়া বাইক, চাকরী। তারও পরে পরবাসে। নওগাঁ থেকে বহুদূরে সাত সমুদ্র পারে হিমশীতল বৃষ্টিভেজা ম্যানচেস্টারে। অনেক ঘরে বাস, অনেক চেনা মুখ, অনেক প্রিয়জন। তারি মাঝে জীবনযাপন। জীবনের এক সারি খ-চিত্র এঁকেছেন মাহফুজুর রহমান। উঠে এসেছে গ্রাম, সমাজ, জীবন, যুদ্ধ, মন্বন্তর, দাঙ্গা, দেশভাগ, ভাষা-আন্দোলন …। তাঁর আশা কেউ কেউ হয়তো ছবিগুলো নিজের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে কোথাও কোনও মিল খুঁজে পাবেন। বলেছেন, তাতেই তাঁর আনন্দ।
“কত ঘরে দিলে ঠাঁই -২য় পর্ব” বইয়ের কথাঃ প্রথম পর্বের শেষ ম্যানচেস্টারে। তারপর ঢাকায় ফেরা। প্রিয়জনে সঙ্গ। আবার ঘর বাঁধা। ফুলার রোডে, আজিমপুরে। বদলে যাচ্ছে ঢাকা। রয়ে যায় আমলাতন্ত্রের গতানুগতিকতা। তার মধ্যেও বৈচিত্রের সন্ধান পান লেখক। বাইরে ঢেউ ওঠে দেশ জুড়ে। গণঅভ্যুত্থান, হরতাল, মশাল মিছিল, গুলিবিদ্ধ মানুষ, কার্ফু, মার্শাল ল’। ফের দেশ ছাড়া। এবারে হল্যান্ডের রটরডামে। সবুজ, সুন্দর দেশ। দেখা মেলে একজন বড় মাপের মানুষের। মানুষের ভালবাসা মেলে। লেখাপড়া চলে। হঠাৎ দেশ থেকে আসে দুঃসংবাদ। ঘুর্ণিঝড়। খবর আসে পঁচিশে মার্চের নৃশংসতার। চেনা চেনা মানুষ নিহতের তালিকায়। স্ত্রী, পুত্র-কন্যা পৌঁছে রটরডামে। তাদের নিয়ে আবার সুখে ঘর বাঁধা। আসে স্বাধীনতার বার্তা, তার সঙ্গে আরও নৃশংসতার খবর। লেখাপড়া সেরে পুনশ্চ ঢাকায়। স্বাধীন দেশ, নূতন দেশ। বদলে গেছে অনেক কিছুই। তার সঙ্গে হারিয়ে গেছে অনেকে। আততায়ীর হাতে প্রাণ হারিয়েছে আপনজন। এরি মধ্যে পরিবাগে খুঁজে পাওয়া একটা ছোট্ট শান্তির নীড়। পাঁচিল ঘেরা বাড়ি, গাঁয়ের আদল। শিউলি ঝরা উঠোন, পাখি ডাকা ভোর। একদিন পাঁচিল টপকে আসে বঙ্গবন্ধু হত্যার খবর। ওলটপালট হয়ে যায় জগৎ। তবু আবার একদিন গতানুগতিকতায় ফেরা। আবার দেশ ছাড়া। পরিবাগের মাটি ছেড়ে নিউ ইয়র্কের সুউচ্চ তলার অ্যাপার্টমেন্টে। আন্তর্জাতিকতায়। সেখানে ইস্ট রিভারের তীরে আবার ঘর বাঁধা। কেটে যায় সেই ঘরে তিনটি যুগ। এই দীর্ঘ সময়ের বিচিত্র কয়েক সারি ছবি লেখক তুলে ধরেছেন বইটির স্বল্প পরিসরে। তাতে রয়েছে অসংখ্য নূতন মুখ, নূতন সখ্য, বারে বারে পুরাতন মুখ ফিরে পাওয়া। রয়েছে সুখ, স্বচ্ছলতা। তার পাশে ব্যথা বেদনা। নিউ ইয়র্কে বাস করেও কিসের দুর্বার টানে লেখক অতীতে ফিরে যান বারে বারে। ঘর থেকে পথে পা ফেলেও চলে যান কোনও পুরাতন ঘরে। দেখেন সেই ছেলেবেলার সেই পার্কের হারিয়ে যাওয়া মুচকুন্দের কাছেই বেড়ে উঠছে দুটি শিুশু মুচকুন্দ।